(ভাঙড়) দক্ষিণ ২৪ পরগনা: গুন্ডারা দেশের সম্পদ নয়। কয়েকটি নেতার কথায় অশান্তি করতে দেবেন না। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ের জনসভা থেকে পাহাড়বাসীর উদ্দেশ্যে এই বার্তা দিয়ে নাম না করে মোর্চাকে হুঁশিয়ারি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এদিন ফের একবার মোর্চাকে হুঁশিয়ার করেন মুখ্যমন্ত্রী। বললেন, পাহাড়ে বৈঠক করেছি, শান্তিরক্ষা করেছি। আমাকে চমকালে আমি চমকাই না। পাহাড়ে চমকেছিল, আমি কিন্তু পাহাড়ে গিয়েছি। মিটিং করেছি, শান্তিরক্ষা করেছি, তারপর চলে এসেছি। গুন্ডারা কখনও সম্পদ হতে পারে না। কয়েকটা নেতার কথায় পাহাড় অশান্ত হতে দেবেন না, পাহাড়বাসীর কাছে আবেদন করেন মুখ্যমন্ত্রী।

মোর্চার ডাকে সরকারি অফিসে অনির্দিষ্টকালের বনধ শুরুর দিনই একের পর এক সরকারি অফিসে আগুন ধরানো হয়! কোথাও আগুন, কোথাও ভাঙচুর, কোথাও দফতর বন্ধের চেষ্টা। বনধের শুরুর দিনে এভাবেই পাহাড়ে অশান্তি পাকানোর চেষ্টা করল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা।
অতীতে যখনই পাহাড় অশান্ত হয়েছে, তখনই সরকারি অফিস কিংবা বাংলোয় আগুন ধরানোর ছবি ধরা পড়েছে! কিন্তু, সেক্ষেত্রে মিছিল করে, একজোট হয়ে হামলার ঘটনা ঘটত, আর এক্ষেত্রে দেখা গেল অন্য ছবি! গেরিলা কায়দায় সুযোগ বুঝে হামলা চালিয়েই চম্পট দিল হামলাকারীরা!
সোমবার ভোর সাড়ে ছ’টা নাগাদ বিজনবাড়িতে বিডিও অফিসে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। অফিসের ভিতরে তখন কেউ ছিলেন না। আগুন দেখে পুলিশ ও নিরাপত্তাকর্মীরা ছুটে এলেও, তার আগেই সেখান থেকে চম্পট দেয় হামলাকারীরা।
পুলিশ তিনজন মোর্চা সমর্থককে গ্রেফতার করেছে। বিজনবাড়ি থেকে একটু দূরে লেবং কার্ট রোডে পূর্ত দফতরের অফিসে। বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ হামলা চালানো হয়। পেট্রোল ঢেলে ধরিয়ে দেওয়া হয় আগুন। কাল থেকে সরকারি অফিসগুলির সামনে পিকেটিং করার কথা রয়েছে মোর্চা সমর্থকদের। হোটেল, পরিবহণ, স্কুল-কলেজ, দোকানপাটকে অবশ্য বনধের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে।



এরপর হামলার খবর আসে সোনাদা থেকে। বিদ্যুৎ বণ্টন নিগমের অফিসে ভাঙচুর চালানো হয়। সুকনায় পঞ্চায়ত অফিস বন্ধের চেষ্টা করে মোর্চা। বনধের জেরে সকাল থেকেই বন্ধ টয় ট্রেন পরিষেবা। কার্শিয়ং থেকে প্রতিদিন সকাল ৭টায় শুরু হয় টয় ট্রেনের যাত্রা। আজ টিকিট কাউন্টার বন্ধ। ফিরে আসছেন পর্যটকরা। স্টেশন চত্বরে লাগানো মোর্চার পতাকা। এর আগে মোর্চার আন্দোলনের জেরে ৮ ও ৯ জুনও বন্ধ হয়ে যায় টয় ট্রেন চলাচল।
যদিও, এতসব ঘটনার পরও মোর্চা গা জোয়ারি মানতে নারাজ। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি বলেন, ফোর্সিবলি কিছু করা হয়নি। করতে পারতাম। করিনি। অ্যাপিল করা হয়েছে। মোর্চাকে বদনাম করার চেষ্টা।
কড়া পাহাড়ার দরুণই, প্রকাশ্য মিছিল বা সভা করে হামলার পরিবর্তে, এই চোরাগোপ্তা হামলার পথ বেছে নেওয়া হল বলে মনে করছেন পুলিশ কর্তারা। আর এই পরিস্থিতিতে যে গুটি কয়েক পর্যটক এখনও পাহাড়ে ছিলেন, তাঁরাও এখন ভয় পেয়ে সমতলের পথে! আর ভয় পাবেনই বা না কেন, খোদ বিমল গুরুংই তো পর্যটকদের নিচে নেমে যাওয়ার বার্তা দিয়েছেন!
এদিকে এই প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার থেকেই আবার নগর দায়রা আদালতে মদন তামাঙ্গ হত্যা মামলায় চার্জ গঠনের শুনানি শুরু হচ্ছে। চলবে তিন দিন। এই মামলায় অভিযুক্তের তালিকায় রয়েছেন, মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুং, তাঁর স্ত্রী আশা গুরুং, মোর্চার সহকারী সম্পাদক বিনয় তামাংরা।