কলকাতা: শেষপর্যন্ত নারদ-মামলার তদন্ত করবে সিবিআই। শুক্রবার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার হাতে এই তদন্তভার তুলে দিল কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিশীথা মাত্রে এবং বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চ।
ভারপ্তাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিশীথা মাত্রে এদিন মন্তব্য করেন, ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে, যে ঘটনা সামনে এসেছে তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এবং গুরুত্বপূর্ণ। যাঁদের নাম জড়িয়েছে তাঁরা সমাজে প্রতিষ্ঠিত। পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নাম জড়িয়েছে। দেখা গিয়েছে, কোনও কিছু পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে তাঁরা টাকা নিচ্ছেন। ফরেনসিক পরীক্ষায় প্রমাণিত, যে ক’টি ফুটেজ খোলা সম্ভব হয়েছে তা বিকৃত নয়।
সহমত পোষণ করে বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর পর্যবেক্ষণে বলেন, সাধারণ মানুষের বিশ্বাস পুনরুদ্ধারে নিরপেক্ষ এবং স্বাধীন তদন্ত প্রয়োজন। সেই জন্যই সিবিআইকে প্রাথমিক তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হল।
সিবিআইয়ের আইনজীবী আশরফ আলি বলেন, আমরা খুশি যে কোর্ট মনে করেছে সিবিআই তদন্ত করলে সত্যি বেরোবে। পাল্টা কলকাতা হাইকোর্টের রায়কে সুপ্রিম কোর্ট চ্যালেঞ্জ করার কথা জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, অবশ্যই দল ও সরকার বিচার পেতে উচ্চতর আদালতে যাবে। যদি আমাদের মনে হয় আমরা বিচার পাইনি, তাহলে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার অধিকার রয়েছে আমাদের।
বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী আরও বলেন, দুর্নীতি একটি বড় অপরাধ। সাধারণ মানুষের বিশ্বাসের প্রতি আঘাত। সাধারণ মানুষের বিশ্বাস থাকে সরকারেরর উপরে। আর এই ঘটনায় ক্ষমতাশালী সরকারি পদাধিকারী এবং মন্ত্রীদের নাম জড়িয়েছে।
পাল্টা যুক্তি দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ৩ জন মন্ত্রীর নাম রয়েছে। ভোটের সময় ইস্যু করা হয়। বিশ্বাস না থাকলে ২০১৬-তে বিশাল ভোট এরা জিতল কী করে। তাঁর দাবি, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই ২০১৪-র লোকসভা ভোটের ঠিক মুখে এই স্টিং অপারেশন সামনে আনা হয়। রায়ের আগেই কীভাবে জানল বিজেপি, প্রশ্ন মমতার।
মানুষের ভরসা নেই এমনটা বলা উচিত নয়। কলকাতা হাইকোর্টর রায় প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর আরও একটি মন্তব্য জল্পনা আরও উস্কে দিয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, দে আর সুপ্রিম। কিং ক্যান ডু নো রং। ওনলি কমনার ক্যান।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিশীথা মাত্রে এদিন নির্দেশ দিয়েছেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোনওরকম দেরি না করে নারদকাণ্ড সংক্রান্ত সমস্ত নথি রিপোর্ট ও অন্যান্য সাক্ষ্য সিবিআইকে নিতে হবে। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষ করে, প্রয়োজনে নির্দিষ্ট অভিযোগে মামলা রুজু করে তদন্তের পথে এগোতে হবে। গোটা কাজটা করতে হবে দ্রুততা ও তৎপরতার সঙ্গে।
পাশাপাশি, নারদকাণ্ডে আইপিএস অফিসার এসএমএইচ মির্জার বিরুদ্ধে পদক্ষেপের নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের। এক সপ্তাহের মধ্যে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। তাঁকে সাসপেন্ড করার বিষয়টিও বিবেচনা করে দেখতে হবে। বলল ডিভিশন বেঞ্চ। মুখ্যমন্ত্রীর অবশ্য দাবি, এসএমএইচ মির্জার বিরুদ্ধে আগে থেকেই বিভাগীয় তদন্ত চলছে।
নারদ স্টিংকাণ্ডে কলকাতা পুলিশ যখন তদন্ত শুরু করে, তখন আইপিএস অফিসার এসএমএইচ মির্জাকে লালবাজারে ডেকে তাঁর বয়ান রেকর্ড করা হয়। এবার কলকাতা হাইকোর্ট অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে আরও কড়া ব্যবস্থার নির্দেশ দিল