মোহন দাস,খানাকুল: বিয়ে মানেই জমকালো একটা অনুষ্ঠানের ছবি ভেসে ওঠে মনে। কিন্তু যখন কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দেয়, তখন অনেক ক্ষেত্রে বিয়ে হয়ে ওঠে দায়বদ্ধতার বিষয়।আর এই দায়বদ্ধতা পালনেও ভরা বন্যায় নৌকায় চেপে বিয়ে করতে গেলেন হুগলির খানাকূলের এক যুবক। কোনও আড়ম্বর নয়, একেবারে তাড়াতাড়ি ও সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানে বিয়ে সারলেন তিনি।
কয়েক দিনের অবিশ্রান্ত বর্ষণে রাজ্যের বিভিন্ন নদীর জলস্তর ফুলেফেঁপে উঠেছে। বাঁধভাঙা বন্যার জল ভাসিয়ে দিয়েছে অনেক গ্রাম। হুগলির খানাকুলের হীরাপুর গ্রামও বানভাসি। সেই গ্রামেরই যুবক আমিরুল হকের বিয়ের কথা ছিল শাবল সিংহপুরের গ্রামে। সেই গ্রামেও বন্যা। তাহলে বিয়ে কি পিছিয়ে যাবে! কিন্তু সমস্ত আয়োজন তো সম্পূ্র্ণ। বিয়ে পিছিয়ে গেলে অসুবিধার মুখে পড়বেন কনের পরিবারের লোকজন।তাই কর্তব্য পালনেই তৎপর হলেন আমিরুল। বাড়ি থেকে নৌকায় চড়ে পাড়ি দিলেন কনের বাড়ি। আর বন্যার জল পেরিয়ে এই যাত্রাটা একেবারেই সহজ ছিল না। ঝুঁকি তো ছিলই।
প্রাণের ঝুঁকি নিয়েই আমিরুল বাড়ি থেকে নৌকা করে সাড়ে তিন কিমি দূরে রাজহাটি এলাকায় আসেন। প্রায় পনেরো ফুট গভীর জলের ওপর দিয়ে নৌকায় আসেন বর। আবার সেখানে নেমে পথ পরিবর্তন করে ফের আরও প্রায় চার কিমি দূরে প্রত্যন্ত ও ভয়াবহ বন্যা কবলিত এলাকা শাবল সিংহপুরে গেলেন তিনি। শাবল সিংহ পুরের অবস্থা আরও ভয়ংকর। সেখানে এক তলা বাড়ির কোন চিহ্নই নেই। বাড়ির দেড় তলা পর্যন্ত ডুবেছে। জল থৈ থৈ করছে চতুর্দিক।
তা সত্বেও কথা রাখতে খন্দকার আমিরুল হক বিয়েটা সেরে নিলেন এই বিপদসঙ্কুল পথ পাড়ি দিয়ে।মেয়ের পরিবারের লোকজন যাতে কোন অসুবিধার মধ্যে না পড়েন তাই জন্যই এই সিদ্ধান্ত তাঁর। বিয়ের সব কিছুই আয়োজন পরিপূর্ণ। আর এই বন্যার জন্য বিয়ের অনুষ্ঠান বাতিল করে দিলে ভীষণ সমস্যার মধ্যে পড়ে যাবেন শ্বশুর বাড়ির লোকজন। তাই সংক্ষেপেই সেরে নিতে বিয়ে করতে গেলেন তিনি। বন্যার ভয়াবহতাকে তোয়াক্কা না করেই তিনি হাজির হয়ে যান বিয়ের মন্ডপে, নববধূকে বাড়িতে নিয়ে আসতে।