সোমনাথ মিত্র, তারকেশ্বর: শ্রাবণ মাসে অতিরিক্ত পুণ্যার্থী সমাগমের জন‍্য তারকেশ্বর মন্দিরে প্রবেশের ক্ষেত্রে আরও কঠোর বিধিনিষেধ জারি করল প্রশাসন।


‌তারকেশ্বর মন্দিরে প্রবেশের আগে প্রত‍্যেক পুণ্যার্থীকে থার্মাল চেকিং করা হচ্ছে স্থানীয় পৌরসভার উদ‍্যোগে। অতিরিক্ত তাপমাত্রা থাকলে পুণ্যার্থীদের র‍্যাপিড টেস্ট করার ব‍্যবস্থা করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে নেগেটিভ রিপোর্ট থাকলে তবেই মন্দিরে প্রবেশের অনুমতি মিলছে। 


তাছাড়া, মন্দির চত্বরে একসঙ্গে অনেক পুণ্যার্থীর ভিড় এড়াতে মন্দিরের ১,২, ৪ -- মোট ৩টি গেট দিয়ে পর্যায়ক্রমে ২০০ জনকে প্রবেশ করানো হচ্ছে। 


শ্রদ্ধা নিবেদনের পর ৫ ও ৬ নম্বর গেট দিয়ে পুণ্যার্থীরা বেরিয়ে যাচ্ছেন।  করোনা সম্পর্কিত বিধিনিষেধ মেনে চলতে মন্দির চত্বরে ও আশেপাশের এলাকাতে মাইকিং করা হচ্ছে মন্দির কর্তৃপক্ষ ও পৌরসভার উদ‍্যোগে।  


হুগলি জেলা গ্ৰামীণ পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা নিরাপত্তা ব‍্যবস্থা এবং করোনা সম্পর্কিত বিধিনিষেধ ঠিকঠাক মানা হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখছেন মন্দির চত্বর এলাকায়।


একইসঙ্গে অতিরিক্ত মানুষ যাতে অযথা মন্দির চত্বরে ঘোরাফেরা না করেন, কোথাও যেন কেউ জমায়েত না করেন, প্রত‍্যেকে যাতে মাস্ক পরে মন্দিরে প্রবেশ করেন তাও প্রচার করা হচ্ছে মন্দির সংলগ্ন এলাকাতে। 

‌উল্লেখ‍্য কয়েকদিন আগেই শ্রাবণী মেলা উপলক্ষ‍ে জলযাত্রা বা কাঁওর যাত্রা নিষিদ্ধ করেছে মন্দির কর্তৃপক্ষ। বাঁকে করে জল নিয়ে মন্দিরে আসা যাবে না। 


করোনা সম্পর্কিত সমস্ত বিধিনিষেধ মেনে যাত্রীদের মন্দিরে প্রবেশের কথা বলা হয়েছে। প্রত‍্যেক পুণ্যার্থীর মুখে মাস্ক থাকা বাধ‍্যতামূলক। কিন্তু গত সপ্তাহে পুণ্যার্থীদের মধ‍্যে সচেতনতার অভাব লক্ষ্য করা যায়। 


সামাজিক দূরত্ব শিকেয় তুলে ঘেঁষাঘেঁষি করেই জল ঢালার লাইনে দাঁড়াতে দেখা গিয়েছিল পুণ্যার্থীদের। যা নিয়ে রীতিমতো চিন্তিত ছিল তারকেশ্বর পৌরসভা। প্রশাসন কড়া ব‍্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানিয়েছিলেন। 


তাই এই সপ্তাহ থেকে আগত যাত্রীদের জন‍্য করোনা বিধিনিষেধ আরো কড়াকড়ি করা হয়েছে। মন্দিরে প্রবেশের ৩টি গেটে প্রত‍্যেক পুণ্যার্থীদের করা হচ্ছে থার্মাল চেকিং। 


পৌরসভা তাদের নিজস্ব স্বাস্থ‍্যকর্মীদের দুটি শিফটে মন্দিরের গেটে থার্মাল চেকিংয়ের জন‍্য মোতায়েন করেছে। প্রয়োজনে করোনা পরীক্ষা  করার ও ব‍্যবস্থাও রাখা হয়েছে মন্দির চত্বরে। 


স্থানীয় স্বাস্থ‍্য দফতরের কর্মীরা করোনা পরীক্ষার জন‍্য অস্থায়ী ক‍্যাম্পে থাকছেন সর্বদা। প্রত‍্যেক পুণ্যার্থীরা যাতে মাস্ক পরেন, সামাজিক দূরত্ব যাতে বজাই থাকে, সরকারি বিধিনিষেধ কঠোরভাবে মানা হচ্ছে কিনা তার জন‍্য নজরদারি চালানো হচ্ছে হুগলি জেলা গ্ৰামীণ পুলিশের পক্ষ থেকে। 


মন্দির চত্বরে এই ব‍্যবস্থাকে স্বাগত জানিয়েছেন স্থানীয় মানুষ ও পুণ্যার্থীরা। অতিমারীর মধ‍্যেও সুন্দর ব‍্যবস্থাপনায় জল, ফুল, বেলপাতা ঢালতে পেরে খুশি পুণ্যার্থীরা।

‌করোনা অতিমারি বদলে দিয়েছে অনেক কিছু। বিগত দিনের পরিচিত অনেক দৃশ‍্য এখন অমিল অনেক জায়গাতেই। বিগত বছর গুলোতে, এই সময়ে শ্রাবণী মেলা উপলক্ষ‍ে প্রত‍্যেক রবি ও সোমবার উপচে পড়ত ভক্তের ভিড়।


লক্ষাধিক ভক্তের ভিড়ে কার্যত মহা তীর্থক্ষেত্র হয়ে উঠত তারকেশ্বর ধাম। নো এন্ট্রি থাকত তারকেশ্বরের সঙ্গে সংযোগকারী সমস্ত রাস্তাগুলো। 


হাওড়া -তারকেশ্বর শাখায় ট্রেন যাতায়াত করা ছিল খুবই কষ্টসাধ‍্য বিষয়। এরাজ‍্য ছাড়াও বিহার, উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড,ওড়িশা থেকে বাঁক কাঁধে লক্ষাধিক মানুষ পায়ে হেঁটে তারকেশ্বরে মন্দিরে আসতেন বাবা তারকনাথের মাথায় জল ঢালতে। 


কিন্তু পরিচিত সেই দৃশ‍্য অমিল এবারে। গতবার পুরোপুরি বন্ধ ছিল মন্দির। এবছর মন্দির খোলা। কিন্তু নির্দেশিকা জারি করে   জল যাত্রা বা কাঁওর যাত্রা বন্ধ করেছে মন্দির কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন।


তারই মধ‍্যে গুটিকয়েক আগত যাত্রীদের দেখে কিছুটা আশার আলো দেখছেন মন্দির নির্ভর স্থানীয় ব‍্যবসায়ীরা।