কলকাতা: নবান্ন সভাগৃহে বণিকসভার বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই বৈঠকে তিনি রাজ্যে চলতি বিধিনিষেধে কিছু ছাড়ের কথা ঘোষণা করলেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কোভিডের মধ্যে সমস্যা হচ্ছে, কিছু কিছু লোক বিধিনিষেধ মানে না। হোটেল-রেস্তোরাঁকে যদি ছাড় দিই, বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮টা অবধি খোলা রাখা যেতে পারে। কর্মীদের ভ্যাকসিন দিয়ে রেস্তোরাঁ খোলা যেতে পারে। কোভিড বিধি মেনে সবকিছু করতে হবে।’


মুখ্যমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, শপিং মলের ক্ষেত্রেও আংশিক ছাড় দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। এ বিষয়ে ১৫ তারিখের পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। 


আজ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে ছিল ২৯টি বণিক সংগঠন। বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সবার কথা ভেবে আমরা অন্যান্য রাজ্যের মতো লকডাউন করিনি, কার্ফু করিনি। কিছু বিধিনিষেধ জারি করেছি, মানুষ সহযোগিতা করছেন। বেলা ১২টা থেকে বিকেল ৩টে পর্যন্ত খুচরো দোকান খোলা রয়েছে। নির্মাণ সংস্থাগুলি ভ্যাকসিন নিয়ে কর্মীদের কাজ করাতে পারে। আমরা ইতিমধ্যেই ১ কোটি ৪০ লক্ষ ভ্যাকসিন দিয়েছি। ৬০-৭০ হাজার ভ্যাকসিন আমরা রোজ দিয়ে যাচ্ছি। বেশি মানুষ যাতে জমায়েত করতে না পারেন, সেটা দেখতে হবে। রাজ্যের হাট-বাজার নিয়মিত স্যানিটাইজ করা হোক। পরিচারিকাদের টিকাকরণের দিকটিও গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।’


মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ভ্যাকসিনেশনে বণিক সংগঠনগুলির সহযোগিতা দরকার। আপনাদের কর্মীদের টিকা দিতে যে টাকা লাগবে, তা ত্রাণ তহবিলে দিন। সেই টাকায় টিকা কিনে সংশ্লিষ্ট সংস্থার কর্মীদের দিতে পারবে রাজ্য সরকার। আমরা সবাইকে ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্যাপারে যতটা সম্ভব চেষ্টা করছি। এক একজনকে ভ্যাকসিন দিতে ৬০০ থেকে ১,২০০ টাকা খরচ হচ্ছে। ১.৪৪ কোটি মানুষকে ভ্যাকসিন দিয়েছি বিনামূল্যে। আমরা বিশেষ করে সুপার স্প্রেডার যেখান থেকে হতে পারে, যেমন পোস্তা বাজারের কর্মচারী, হকার, মৎস্য বিক্রেতা, সবজি বিক্রেতা, গাড়ির ড্রাইভার, কন্ডাকটার, এঁদের নিয়মিত ভ্যাকসিন দিচ্ছি। অনেক মানুষ ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। স্বাস্থ্য দফতরে জানান, বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে। কেন্দ্রের কাছে ৩ কোটি ভ্যাকসিন চেয়েছি। ১৭ লক্ষ পেয়েছি। বাকি ভ্যাকসিন আমাদের কিনতে হচ্ছে। ভ্যাকসিনের উপরেও জিএসটি নিচ্ছে কেন্দ্র। ভ্যাকসিন কিনতে প্রচুর টাকা চলে যাচ্ছে। সুপার স্প্রেডারদের ভ্যাকসিনেশনের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। শ্রমিকদের টিকাকরণে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। রাজ্যে সংক্রমণের হার কমেছে। কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ে কম বয়সিদের মৃত্যুর হার বেড়েছে। এক-একটা গ্রামে চিকিত্‍সার ব্যবস্থা করতে পারে বণিকসভা। এটা একটা মহান কাজ হিসেবে চিহ্নিত হবে। চালকলের কর্মীদেরও দ্রুত টিকাকরণ দরকার। খুব শীঘ্রই দুয়ারে রেশন প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক সূচনা করা হবে।’


বণিকসভার প্রতিনিধিদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘শিল্পের ক্ষেত্রে যদি আপনারা ভ্যাকসিন জোগাড়ের দায়িত্ব নেন, তাহলে আমরা দিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করব। আবার যে হবে না তার কোনও মানে নেই। আপনারা যদি করে নেন, তাহলে আপনার লেবারকে আপনি ভ্যাকসিন দিন। যে টাকা সরকারের বিপর্যয় মোকাবিলা তহবিলে দেন, তাহলে ওই টাকায় ভ্যাকসিন কিনে দিয়ে দেব। আমরা শ্রমিকদের টিকাকরণে অগ্রাধিকার দিচ্ছি। সংক্রমণ ছড়াক, কোনওভাবেই তা চাই না। জেলার বণিকসভাগুলো যদি জেলার হাট-বাজারগুলো যদি স্যানিটাইজ করতে পারে, তাহলে ভালো হয়। জেলাশাসকরাও জেলার বণিকসভাগুলোর সঙ্গে কথা বলে যদি এটা করে। মাস্ক বিতরণের মতো টুকটাক কাজ। তাতে তারাও পরিচিতি পাবে।’


পর্যটন শিল্প নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘পর্যটন দফতরের হোটেলে যাঁরা আছেন, গাড়ি অ্যাসোসিয়েশন, তাঁদের নিয়ে আলোচনায় বসতে হবে। তাঁরা কীভাবে সাহায্য করবেন, আমরা কীভাবে সাহায্য করতে পারি, সেটা দেখতে হবে। আমি লোক মারার পক্ষে নই। আবার আমি এমন কিছু করব না, যাতে ব্যাপারটা থার্ড ওয়েভের দিকে চলে যায়। সবাই মিলে মোকাবিলা করতে হবে। সেকেন্ড ওয়েভে অল্প বয়সিদের বেশি করোনা হচ্ছে। অনেকে মারা গেছে। অনেক পরিবারই আছে এমন। আমাদের নজর দিতে হবে। যতটা পারি কন্ট্রোল করতে হবে।’


টিকাকরণের বিষয়ে বণিকসভা বেঙ্গল চেম্বার অফ কমার্সের প্রস্তাবে সায় দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে যে কমিটি হবে, যে কমন পুল তৈরি হবে, সেটা দিয়ে ঠিক করা যেতে পারে, কার কাছে কতটা ভ্যাকসিন যাবে। আমি ১০০টা ভ্যাকসিন কিনলাম, সেটা কাকে দেব ঠিক করা যাবে। আপনারা বেসরকারিভাবেও যদি ভ্যাকসিন পান, তাহলে কেনার চেষ্টা করুন। পারস্পরিক বোঝাপড়া বজায় রাখতে হবে। যে কোনও শিল্প সংস্থার সামনে টিকাকরণের শিবির করলে, সরকার তার অনুমতি দিচ্ছে। ৭২ ঘণ্টা আগে শ্রমিকদের জানান। ট্রেন তো বন্ধ। বাসে আসতে হবে। স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে কথা বলে নিন। প্রয়োজনে বেসরকারি জায়গা থেকে কিছু ভ্যাকসিন কিনিয়ে দিন। যখন পাচ্ছি না, তখন দেখতে হবে অন্য কোনও সোর্স থেকে পাওয়া যায় কি না।’


মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত ইটভাটাগুলিকে সরকার সাধ্যমতো সাহায্য করবে। ছোট ছোট সংস্থাগুলি একজোট হোন। কমন পুল করে সেখান থেকে ভ্যাকসিন বিতরণ করুন। ১০টা ইউনিট নিয়ে করুন। সবজি বাজার সকাল ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত খোলা, অন্য রিটেল মার্কেট ১২টা থেকে ৩টে পর্যন্ত খোলা। যাদের কেনার তারা ঠিকই ওই সময় কিনবে। এরপর ১২টা থেকে থেকে ৪টে অবধি খোলা হবে। রাইস মিলের কর্মীদের ভ্যাকসিন দিতে হবে। এটা খুব জরুরি। ফ্লাওয়ার মিল-রাইস মিল সব একসঙ্গে কাউন্ট হবে। আমরা দুয়ারে রেশন প্রকল্প চালু করব শিগগিরই। সেটা আপনাদের জানিয়ে দেওয়া হবে।’