মাহেশ: করোনা আবহে এবছরও হচ্ছে না মাহেশের রথযাত্রা। এবারও গড়াবে না হুগলির মাহেশের রথের চাকা। তবে বিশেষ পূজার্চনা হবে। 


এবার মাসির বাড়ি যাবেন না জগন্নাথদেব। তার বদলে নারায়ণ শিলাকে নিয়ে প্রথমে পদব্রজে রথের চারপাশে ঘোরানো হবে। এরপর নিয়ে যাওয়া হবে ১ কিলোমিটার দূরে মাসির বাড়িতে। 


মন্দির চত্বরে তৈরি করা হয়েছে অস্থায়ী মাসির বাড়ি। সেখানেই রাখা হবে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রাকে। সেখানেই হবে নিয়মমাফিক পুজো। 


এ বছর ৬২৫ বছরে পা দেবে মাহেশের রথযাত্রা। ভারতের দ্বিতীয় ও বাংলার সবচেয়ে পুরনো মাহেশের রথ। এমনটাই অনুমান ইতিহাসবিদদের। এখানের বিগ্রহ বহু প্রাচীন। মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যদেবও এখানে জগন্নাথ দর্শনে এসেছিসেন।


মাহেশকে বলা হয় 'নব নীলাচল'। অর্থাৎ নতুন পুরী। এখানকার রথযাত্রা উৎসবকে বিশ্বের দ্বিতীয় প্রাচীনতম হিসেবে গণ্য করা হয়। প্রতি বছর এই উপলক্ষে ২ লক্ষর বেশি ভক্তর সমাগম হয়। 


কথিত আছে, জগন্নাথদেবের ভক্ত শ্রীচৈতন্য একবার পুরী যাত্রার পথে মাহেশের মন্দির পরিদর্শনে এসেছিলেন। এখানে তিনি অচৈতন্য হয়ে পড়েন এবং গভীর সমাধিতে চলে যান। তার পর থেকে এই জায়গার নামকরণ হয় নব নীলাচল। 


মাহেশের মন্দির এবং বিগ্রহ তৈরি করেছিলেন ধ্রুবানন্দ ব্রহ্মচারী। কিন্তু, রথযাত্রা উৎসব শুরু করেন শ্রীচৈতন্যর শিষ্য কমলাকর পিপলাই। যিনি পরে মন্দিরের প্রধান পুরোহিত হন। পিপলাই পরিবারের উত্তরসূরীরাই রয়েছেন মন্দিরের তত্ত্বাবধানে।


পুরীর জগন্নাথের ১২ বছর অন্তর হয় নবকলেবর। কিন্তু মাহেশে ৬২৫ বছর ধরে একই বিগ্রহে পুজো হয়ে আসছে। আগে কাঠের রথ থাকলেও, এখন লোহার রথ।


রথযাত্রা চলছে সেই ১৩৯৬ সাল থেকেই। ১৮৮৫ সাল থেকে ব্যবহার করা হচ্ছে এখনকার রথটি। ১৫৫ বছর আগে শ্যামবাজারের বসু পরিবারের সদস্য হুগলির দেওয়ান কৃষ্ণচন্দ্র বসু কুড়ি হাজার টাকা ব্যয়ে ৫০ ফুট উঁচু ১২৫ টনের রথটি তৈরি করান।


এই রথই এতদিন টানা হয়ে এসেছে।  রথযাত্রা উপলক্ষে প্রতিবার মেলা বসে এখানে। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের রাধারানি উপন্যাসের প্রেক্ষাপট ছিল এই মাহেশের রথযাত্রা।