সুনীত হালদার,ভাস্কর ঘোষ, হাওড়া: লাগাতার ভারী বৃষ্টি। প্রবল বৃষ্টিতে হাওড়ার উলুবেড়িয়া কালিনগরে রাস্তায় ধস নামল। এই ঘটনায় ৫টি দোকান ধসে গিয়েছে, হেলে পড়েছে বাড়ি। এলাকায় ধস নামায় তৈরি হয়েছে আতঙ্ক।একইসঙ্গে টানা রাতভর বৃষ্টিতে জলমগ্ন হাওড়া শহরাঞ্চল। মধ্য হাওড়ার পঞ্চানন তলা, টিকিয়াপাড়া, উত্তর হাওড়ার সালকিয়া, ঘুসুড়ি ছাড়াও বেলগাছিয়া রামরাজাতলা সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় কোথাও হাঁটু সমান আবার কোথাও গোড়ালি সমান জল। ৫০টি পাম্প চালিয়ে দ্রুত জল নামানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, জানানো হয়েছে হাওড়া পুরসভার তরফে।
এক রাতের ভারী বৃষ্টিতে কার্যত লণ্ডভন্ড হাওড়ার উলুবেড়িয়ার কালীনগরের ওই এলাকা। প্রায় ৫০ মিটার রাস্তা বসে গিয়েছে জলের তোড়ে। সেই সঙ্গে বসে গিয়েছে মুদিখানা, স্টেশনারি, তেলেভাজার মতো পাঁচ-পাঁচটি দোকান! করোনাকালে এমন ক্ষতির মুখে পড়ে মাথায় হাত ব্যবসায়ীদের। ক্ষতিগ্রস্ত এক দোকানের মালিকের গলায় হতাশার সুর। তিনি বললেন, দোকান পুরো বসে গেল। মাল বের করতে পেরেছি। কিন্তু দোকানটাকে বাঁচাতে পারলাম না। লকডাউনে এমনিতেই অবস্থা খারাপ। তিন চার ঘণ্টা দোকান খুলে কোনওমতে চলছিল। সেটাও বন্ধ।
প্রাথমিক অনুমান, জলের চাপে মাটি সরেই এই বিপর্যয়। স্থানীয় সূত্রে খবর, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের সময় গঙ্গায় জলোচ্ছ্বাসের কারণে ফুলেফেঁপে উঠেছিল রাস্তা লাগোয়া চাঁপা খাল। জলের ধাক্কায় দুর্বল হয়ে পড়ে রাস্তার নিচের মাটির অংশ। বৃহস্পতিবার হাওড়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক পঞ্চায়েত এবং উলুবেড়িয়ার মহকুমা শাসক ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখেন। উলুবেড়িয়া মহকুমা শাসক অরিন্দম বিশ্বাস বলেছেন, সেচ দফতরের ইঞ্জিনিয়াররা পরিদর্শন করছেন। আগে রাস্তা সারানো হবে। ক্ষতিগ্রস্ত দোকানদের চিহ্নিত করে পরে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
হাওড়া গ্রামীণ এলাকায় যখন এই ভয়াবহ ছবি, চরম দুর্ভোগ শহরাঞ্চলেও। পঞ্চানন তলা, টিকিয়াপাড়া, সালকিয়া, ঘুসুড়ি, বেলগাছিয়া, রামরাজাতলা, সর্বত্র এক ছবি। একাধিক জায়গায় হাঁটু সমান জল।হাওড়া পুরসভা সূত্রে খবর, ৬৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে প্রায় ৩৫টি ওয়ার্ডই জলমগ্ন। দ্রুত জল নিষ্কাশনের আশ্বাস দিয়েছে পুরকর্তৃপক্ষ।
হাওড়া পুরসভার প্রশাসক মণ্ডলীর সদস্য ভাস্কর ভট্টাচার্য বলেছেন,জল যাতে শহর থেকে দ্রুত নেমে যায়, তার চেষ্টা চলছে। পুরসভার নিজস্ব ও ভাড়া করা মিলিয়ে মোট ৪৫টি পাম্প চালানো হচ্ছে। প্রতিটি লকগেট খুলে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, এখনই বৃষ্টি কমবে না বলে পূর্বাভাস আবহাওয়া দফতরের। উল্টে, আগামী ২৪-ঘণ্টায় কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গে কাল থেকে বৃষ্টি বাড়বে বলে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, আগামী ২ থেকে ৩ ঘণ্টার মধ্যে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। কলকাতা, দুই ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুরে হবে বৃষ্টি। হাওড়া হুগলি, বাঁকুড়াতেও বজ্রবিদ্যুত্-সহ বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।
এদিকে, দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা ঢুকতেই জল দুর্ভোগের চেনা ছবি ফিরল হাওড়ার বেলুড়ে। লাগাতার বৃষ্টিতে জলমগ্ন বেলুড় স্টেশনের আন্ডারপাস।শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার সংযোগস্থল এভাবে জলবন্দি হয়ে যাওয়ায়, রাস্তার ভিড় উঠে এসেছে রেললাইনে।নিত্যদিনের কাজের তাগিদে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে চলছে লাইন পারাপার। আন্ডারপাস জলরুদ্ধ হয়ে পড়ায়, দুধের ক্যান থেকে সাইকেল, স্টেশনের ধাতব বেড়া টপকে একপ্রান্ত থেকে আরেকপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছেন ভুক্তভোগীরা। স্থানীয় এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, পুলের তলায় জল জমে গিয়েছে। সাইকেল নিয়ে পারাপার করতে হচ্ছে। অল্প বৃষ্টিতেই জল জমে যায়। লাইন টপকে যেতে হয়।
হাওড়া জেলার বালি বিধানসভার সঙ্গে ডোমজুড় বিধানসভাকে সড়কপথে জুড়েছে বেলুড় স্টেশনের এই আন্ডারপাস। সাঁপুইপাড়া, নিশ্চিন্দা এলাকার বাসিন্দাদের চিকিৎসার জন্য স্টেশন লাগোয়া বেলুড় স্টেট জেনারেল হাসপাতালই সবচেয়ে বড় ভরসা। প্রসূতি মায়েদের চিকিৎসা থেকে করোনার ভ্যাকসিনেশন সবই চলছে সেখানে। আন্ডারপাস জলে ডুবে যাওয়ায়, চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে হাসপাতালমুখী মানুষকে। এক টোটোচালক বলেছেন, এখানে প্রাথমিক চিকিৎসা হয়। করোনার ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। সাধারণ মানুষের খারাপ অবস্থা। ট্রেন, বাস চলছে না। আমরা টোটোয় নিয়ে যাই। যাঁরা ভ্যাকসিন নিচ্ছেন বিপদ হাতে নিয়ে হেঁটে যেতে হচ্ছে।
রেলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ওটা নিচু এলাকা। অবিলম্বে জয় বের করার ব্যবস্থা চলছে।