রানা দাস, কাটোয়া : বিপ্লবীদের উদ্বুদ্ধ করতে নেতাজিকে কাটোয়ায় নিয়ে এসেছিলেন তাঁর দাদু । ছাত্রদের সেই গল্প শোনান স্বাধীনতা সংগ্রামীর নাতি গৃহ শিক্ষক সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়। নেতাজির সঙ্গে দাদু শ্যামরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের ছবি আজও যত্ন করে রাখা তাঁর পড়ার ঘরে।পড়াতে বসে শুধু দাদু নয়, আরও নাম না জানা, কত হারিয়ে যাওয়া, স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন তাঁর ছাত্রছাত্রীদের।





১৯৩১ সালে ব্রিটিশদের হঠাতে গোটা দেশের সাথে ঐক্যবব্ধ হচ্ছিল বাংলার মানুষ। এমন একটা সময় স্বাধীনতা সংগ্রামী শ্যামরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় ও জিতেন্দ্রনাথ মিত্রের ডাকে কাটোয়ায় আসেন নেতাজি। সেই সময় নেতাজি দেশপ্রেমের মন্ত্রে কাটোয়ার বিপ্লবী ও দেশপ্রেমীদের উজ্জীবিত করেছিলেন। নেতাজির খুবই স্নেহভাজন ছিলেন শ্যামরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়। সেই সময় তিনদিন কাটোয়াতেই ছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। গোপন বৈঠক থেকে শুরু করে জনসভা সব কিছুতেই নেতাজির পাশেই ছিলেন শ্যামরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়। ব্রিটিশদের হাতে ধরা পড়ে দুবার জেলও খাটতে হয়েছিল তাঁর দাদু শ্যামরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়কে। সেইসব অজানা ইতিহাসই ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে তুলে ধরেন স্বাধীনতা সংগ্রামীর নাতি সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়। 


এক সময় যে বাড়ি বিপ্লবীদের আনাগোনায় গম গম করতো,আসতেন হেমন্ত বসু, বিকেকনন্দের ভাই ভুপেন্দ্রনাথ দত্ত, আজ সেই বাড়ি জরাজীর্ণ। বিপ্লবী  ফকির চন্দ্র রায়ের লেখাতে উঠে এসেছে শ্যামরঞ্জন বাবুর নাম। অনেকে জানেনই না, এই বাড়িতেই থাকতেন নেতাজির খুব প্রিয় ও আজাদ হিন্দ বাহিনীর সেনাপতি ক্যাপ্টেন শাহনওয়াজ খানের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ শ্যামরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়। তবে  গৃহশিক্ষক সুদীপ্তর  ছাত্র-ছাত্রীরা এখন জানে সেইসব  ইতিহাসের পাতায় না-থাকা  স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নাম। 


কাটোয়া কাছারি পাড়ার বাংলার গৃহশিক্ষক সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায় বাংলা পড়ানোর পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীদের উদ্বুদ্ধ করেন স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কাহিনি বলে। গল্প শোনান তাঁর দাদু শ্যামরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের  সঙ্গে নেতাজির ঘনিষ্ঠতার। নেতাজির ঠিক পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা তাঁর দাদুর ছবি দেখিয়ে বলেন, ইনিই কাটোয়ার  স্বাধীনতা সংগ্রামী শ্যামরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়। গুনেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, জিতেন্দ্রনাথ মৈত্র, বালকৃষ্ণ কোঙার এর মতো কাটোয়ার  স্বাধীনতা সংগ্রামীদের পরিচয় করিয়ে দেন তাঁর ছাত্র ছাত্রীদের সাথে।  পড়ার পরে এই ধরনের গল্প শুনতে বেশ ভালই লাগে ছাত্র-ছাত্রীদেরও । মন দিয়ে শোনে তারা কাটোয়ার স্বাধীনতা সংগ্রামী ও বিপ্লবীদের কথা। 


স্বাধীনতা সংগ্রামী নাতি গৃহশিক্ষক সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়  মাকে নিয়ে থাকেন, সংসার চলে কোনওরকমে। স্বাধীনতা সংগ্রামীর পরিবার বলে আলাদা কোনো সরকারি সাহায্য তাঁরা পাননি । তবে তাই নিয়ে কোনও আক্ষেপ নেই । তাঁদের একটাই দাবি, শ্যামরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের নামে কাটোয়া শহরের কোন একটা রাস্তার নাম  বা শহরে তাঁর আবক্ষ মূর্তি স্থাপন করা হোক। যাতে কেউ ভুলে না যায় নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর অত্যান্ত স্নেহভাজন স্বাধীনতা সংগ্রামী শ্যামরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের কথা।