কলকাতা: অব্যাহত রেফার রোগ!চিকিৎসার জন্য ঘুরতে হল ৪টি হাসপাতাল!হাওড়া থেকে কলকাতা। চারটি সরকারি হাসপাতাল ঘুরে কার্যত বিনা চিকিত্সায় দুর্ঘটনাগ্রস্ত শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ।
মৃত শিশুর নাম একতা শর্মা। বয়স মাত্র ছ’ বছর। বুধবার সে বাড়ির পাশে খেলতে গিয়েছিল। স্থানীয় সূত্রে খবর, শিশু যখন বাড়ি ফিরছিল, তখন রাস্তায় তাকে একটি বেপরোয়া টোটো ধাক্কা মারে! সজোরে লাইটপোস্টে গিয়ে লাগে ছোট্ট শরীরটা!
গুরুতর আহত অবস্থায় শিশুকে প্রথমে হাওড়ার টি এল জয়সবাল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।অভিযোগ, সেখান থেকে রেফার করে দেওয়া হয় হাওড়া জেলা হাসপাতাল। তখন রক্তে ভেসে যাচ্ছে ছোট্ট একতার শরীর! পরিবারের দাবি, হাওড়া জেলা হাসপাতালে গিয়েও বেড পায়নি ৬ বছরের শিশু!চিকিৎসকরা বলেন, অবস্থা সঙ্কটজনক, আপনারা কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।
ততক্ষণে অবস্থার আরও অবনতি হতে শুরু করেছে। ওই অবস্থাতেই দুর্ঘটনায় জখম শিশুকে নিয়ে কলকাতা রওনা দেয় পরিবার।
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এক চিকিৎসক দেখেন। পরিবারের দাবি, তিনি বলেন, এখানে চিকিৎসা করা যাবে না। আপনারা এনআরএসে নিয়ে যান।
পরিজনরা যখন এনআরএসে পৌঁছয় তখন কেটে গিয়েছে কয়েক ঘণ্টা! শুরু হয় প্রাথমিক চিকিৎসা। কিন্তু ভর্তির আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে শিশুকন্যা!

অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘুসুড়ির টিএল জয়সবাল হাসপাতালের সুপার জানিয়েছেন, পর্যাপ্ত পরিকাঠানো নেই। তাই হাওড়া জেলা হাসপাতালে রেফার করা হয়েছিল।যদিও এ নিয়ে হাওড়া জেলা হাসপাতালের সুপার (নারায়ণ চক্রবর্তী) কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
হাওড়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জানিয়েছেন, শিশুর অবস্থা অত্যন্ত সঙ্কটজনক ছিল। চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো হাওড়া জেলা হাসপাতালে নেই। তাই তৎক্ষণাৎ রোগীকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপারের প্রতিক্রিয়া, তাঁরা সুনির্দিষ্ট কোনও অভিযোগ পাননি। পেলে তা খতিয়ে দেখা হবে।
হাসপাতালগুলির ‘রেফার রোগ’ সারাতে সম্প্রতি উদ্য্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার। গত পঁচিশে সেপ্টেম্বর থেকে স্বাস্থ্যভবনে চালু হয়েছে ‘রেফারেল কন্ট্রোল রুম’। তাৎপর্যপূর্ণভাবে যে হাসপাতালগুলির বিরুদ্ধে রোগীকে ফিরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে, তার মধ্যে,হাওড়া জেলা হাসপাতাল এবং কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এই কন্ট্রোল রুমের আওতাভূক্ত!
প্রশ্ন উঠছে, ঘটা করে কন্ট্রোল রুম চালুর পরেও কেন সারছে না রেফার রোগ? এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও, তাঁর কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।