কলকাতা: সোমবার রাজ্যে আসছেন প্রধানমন্ত্রী। তার আগে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ফের রাজ্যের নাম বদল প্রসঙ্গে মোদি সরকারকে কাঠগড়ায় তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। এক্ষেত্রেও কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগে তিনি সরব হন। বললেন, রাজ্যের নাম বাংলা করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু ৪ বছর হল, কেন্দ্র করতে দেয়নি, কেন বাংলা বাংলার নামে হবে না, ওরা বলছে বাংলা বললে বাংলাদেশের মতো শোনাবে। পাকিস্তানে তো একটা পঞ্জাব আছে, আমাদেরও পঞ্জাব আছে। আমি বলেছিলাম প্রদেশ দিক। ওদের উত্তরপ্রদেশ আছে, হিমাচল প্রদেশ আছে, বিধানসভায় পাস করে পাঠালাম, কিন্তু করল না।


এপ্রসঙ্গে বিজেপি সাংসদ ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী  বাবুল সুপ্রিয় বলেন, পশ্চিম বাংলা শব্দটার মধ্যে একটা ইতিহাস জড়িয়ে আছে। পশ্চিমবাংলার যারা ইতিহাস জানেন বলে দাবি করেন, তারা পশ্চিম বাংলা ও বাংলার মধ্যে তফাৎ এবং তাৎপর্য বোঝেন। দিদি বোধহয় সেটা বুঝেও বুঝছেন না। উনি বলছেন যে পাকিস্তানে পঞ্জাব আছে, ভারতেও পঞ্জাব আছে। তার মানে এটা নয়, ওটা আছে বলে, আরএকটা ওরকম করতে হবে। পশ্চিমবঙ্গের নামকরণের ক্ষেত্রে সবথেকে যেটা লজিক্যালি কারেক্ট হবে, কেন্দ্রীয় সরকার সেটাকেই করবে। এটা নিয়ে উনি যদি কোনও রাজনীতি করতে চান তাহলে আমি বলব ইতিহাস জেনেও যাঁরা বলছেন তাঁরা রাজনীতির কারণে বলছেন, ইতিহাসকে সম্মান জানিয়ে নয়।


২০১৬-র ২ অগাস্ট  রাজ্য বিধানসভায় রাজ্যের নাম বদলের প্রস্তাব পাস হয়। প্রাথমিকভাবে তিনটি নামের প্রস্তাব পাঠানো হলেও, সম্মতি দেয়নি কেন্দ্র। এরপর ২০১৯-এর ৩ জুলাই  বাংলা, হিন্দি ও ইংরেজি তিনটি ভাষাতেই রাজ্যের নাম বাংলা রাখার জন্য বিধানসভায় সর্বসম্মতি ক্রমে প্রস্তাব পাস হয়। কিন্তু এরপরও রাজ্যের নাম বদলের বিষয়ে অগ্রগতি হয়নি। তা নিয়েই ভাষা দিবসের মঞ্চে সুর চড়ান মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, বাংলার কেউ বড় হলে তাকে নিচে টেনে নামিয়ে আনার প্রবণতা। তার জন্য নেতাজিকে রেয়াত করা হয়নি, বিদ্যাসাগরকে বেয়াত করা হয়নি। কোথাও কোথাও বলছে বাংলার মেরুদণ্ড ভেঙে দেবো। আমি বলছি আসুন না একবার। 


এই নিয়ে পাল্টা কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছে বিজেপিও। শমীক ভট্টাচার্য বলেন, পশ্চিমবঙ্গের নাম বাংলা করার আমরা বিরোধী। দলের এটা নীতিগত সিদ্ধান্ত। আমরা ইতিহাসকে সঙ্গে নিয়েই ভবিষ্যতের ঠিকানা খোঁজার চেষ্টা করব। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সঙ্গে কংগ্রেস বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। সেই দলের গর্ভ থেকে তৃণমূল জন্ম নিয়েছে। বিদ্যাসাগর ও আশুতোষের মূর্তি যারা ভেঙেছিল ঘোষণা করে, তাদের সঙ্গেই তো তৃণমূল কংগ্রেস পা মিলিয়ে হাঁটছে। তাই এসব বলার রাজনৈতিক বা নৈতিক অধিকার তৃণমূলের নেই।


বঙ্গ বিধানসভার নির্বাচনে বিজেপি যেমন বাঙালির ধর্মীয় আর সাংস্কৃতিক আবেগকে কাজে লাগাতে মরিয়া, তেমনই বিজেপির গায়ে বাঙালি বিরোধী-বহিরাগত তকমা সেঁটে দেওয়ার কৌশল নিয়েছে তৃণমূল। এই প্রেক্ষাপটেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একুশে বার্তা-কে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।