কলকাতা: 'ম্যান মেড বন্যা'র অভিযোগ আগেই তুলেছিলেন। এবার বললেন ‘বিগ ক্রাইম’। রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে ফের ডিভিসি-কে নিশানা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে বলেছেন, যে ভাবে জল ছাড়া হয়েছে তা বড় অপরাধ। এত জল আগে কখনও ছাড়া হয়নি। বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে নবান্নে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের পর এ কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি ও ডিভিসি-র ছাড়া জলে প্লাবিত হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর, হুগলির আরামবাগ-সহ ৮ জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা। ক্ষতিগ্রস্ত বহু মানুষ। বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে শনিবার হেলিকপ্টারে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখেন মুখ্যমন্ত্রী।
রাজ্যের ৮ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির জন্য, ফের ডিভিসি-’কেই দায়ী করলেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেছেন, যেভাবে জল ছাড়া হয়েছে, এটা বিগ ক্রাইম। একসঙ্গে কত জল ছাড়া হয়েছে, যা জীবনে হয়নি। এবং আগে হয়েছে কিনা আমি জানি না, ম্যান মেড ফ্লাড আগে বলতাম আমি, সেদিন অনেকে আমাকে সমালোচনা করতেন। এটা ম্যান মেড ফ্লাড।
মুখ্যমন্ত্রীর এই দাবিকে কটাক্ষ করেছে বিজেপি। বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, প্রতিটা বাঁধ বা ব্যারাজের জল ধারনের একটা সীমা থাকে, তার থেকে জল বেড়ে গেলে, সেই ব্যারাজকে জল ছাড়তে হয়, না হলে ব্যারেজ ভেঙে আরও বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়।
এদিন মুখ্যমন্ত্রীর বন্যা দুর্গত এলাকা পরিদর্শনকেও কটাক্ষ করেছেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি। তিনি বলেছেন জলে দাঁড়িয়ে ফোটোশ্যুট করতে গেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেইসঙ্গে রাজ্যকে না জানিয়ে জল ছাড়ার অভিযোগও খারিজ করে দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, রাজ্য সরকারকে জানিয়েই জল ছেড়েছে ডিভিসি। এখন মমতা বলছেন কিছুই জানতেন না।
এদিন বেলা ১২টায় হাওড়ার ডুমুরজলা স্টেডিয়াম থেকে হেলিকপ্টারে রওনা দেন মুখ্যমন্ত্রী। হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর,হুগলি পুরশুড়া, খানাকুল, আরামবাগ,পূর্ব বর্ধমান, বীরভূম...পশ্চিম বর্ধমান...বাঁকুড়া...পশ্চিম মেদিনীপুর...ও পূর্ব মেদিনীপুরের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখেন তিনি।
মাঝে হুগলির আরামবাগে নেমে কালীপুরে বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন মুখ্যমন্ত্রী। ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে জেলা শাসক ও পুলিশসুপারের কাছ থেকে রিপোর্ট নেন।
এরপর প্লাবিত এলাকায় দাঁড়িয়েই ডিভিসি-কে নিশানা করেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেছেন, ডিভিসি’র কাছে ক্ষতিপূরণ চাইতে হতে পারে। কারণ বছরে যদি চার বার করে জল আসে। সব টাকা জলে চলে যাচ্ছে। একবার সারছে, তারপর ভাঙছে। চাষ করছে ভেসে যাচ্ছে, এটা কেন হবে? ঝাড়খণ্ড সরকারকে বলব আমাদের সঙ্গে একটা প্ল্যান করুক। আর কেন্দ্রীয় সরকার অবশ্যই মাস্টার প্ল্যান করুক। আর টাকা দিক। কেন্দ্রীয় সরকার আর ডিভিসি বারবার জল ছাড়বে আর মানুষকে জলে ডোবাবে তা কেন হবে?
রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী পাল্টা প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। শুভেন্দু বলেছেন, পরিস্থিতির জন্য দায়ী মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর সরকার। বন্যা মোকাবিলায় প্রাক-বর্ষার যে কাজ হয়, এবারে মুখ্যমন্ত্রী তা করতে দেননি। কারণ, লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের জন্য খরচ করতে হবে। সেজন্য ওই কাজ হয়নি। বাঁধগুলির অবস্থা বেহাল, অতিবর্ষণে দুর্বল বাঁধ ভেঙেছে। এরসঙ্গে ডিভিসি-র কোনও সম্পর্ক নেই।
এদিকে, দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশনের দাবি, জল ছাড়ার কথা তারা আগেই রাজ্য সরকারকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিল।ই-মেল ও হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমেও রাজ্যকে তথ্য পাঠানো হয়েছিল বলে দাবি করেছে ডিভিসি কর্তৃপক্ষ।
তাদের বক্তব্য,জলাধার থেকে কত জল ছাড়া হবে তার সিদ্ধান্ত নেয় দামোদর ভ্যালি রিজার্ভার রেগুলেশনস্ কমিটি। এতে কেন্দ্রীয় সরকার, ঝাড়খণ্ড সরকার এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রতিনিধিরা রয়েছেন।কখন কত জল ছাড়া হবে, এই কমিটিই সেই সিদ্ধান্ত নেয়।