রাজা চট্টোপাধ্যায়,  জলপাইগুড়ি: ভোটের আগে গমগম করত জলপাইগুড়ি জেলায় বিজেপির সদর দফতর। নেতা-কর্মীদের আনাগোনায় মুখর থাকত বিজেপি সদর দফতর চত্বর। ২০০-র বেশি আসন জিতে ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন ছিল বিজেপি নেতা কর্মীদের। কিন্তু সেই স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে। ভোটের ফল প্রকাশের মাস দেড়েক পর জলপাইগুড়ির এই পার্টি অফিস কার্যত শুনসান। 
বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে ক্ষমতায় আসেনি বিজেপি।  জলপাইগুড়িতেও সব কয়েকটি আসন ধরে রাখা সম্ভব হয়নি বিজেপির।তবে জেলার ৭টি বিধানসভার মধ্যে ৪টি আসনে জয়ী হয়েছে তারা। যা মোটেই খুব একটা খারাপ নয়। তারপরও দলীয় অফিসে এখন হাতগোনা কয়েকজন নেতা-কর্মীকেই দেখা যায়। 
তৃনমূল ছেড়ে বিজেপিতে আসা নেতাকে বিধানসভার ভোটে প্রার্থী করেছিল দল। সেই প্রার্থী পছন্দ না হওয়ায় ক্ষোভে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের একাংশ জেলা পার্টি অফিসে ব্যাপক ভাঙচুরও চালিয়েছিল ও অগ্নিকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটিয়েছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে জেলা পুলিশ প্রশাসনকেও পথে নামতে হয়। 
এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে এখন বিজেপির জেলার নেতাকর্মীরা বা যাঁরা এক সময় তৃনমূল থেকে বিজেপিতে এসেছিলেন মুকুল রায় বা শুভেন্দু অধিকারিদের হাত ধরে, তাঁদের অনেককেই এখন আর জেলা পার্টি অফিসে দেখা যাচ্ছে না। সেই পুরোনো বিজেপির জেলা দফতরের উপচে পড়া ভিড়ের ছবিটা এখন আর চোখে পড়ছে না।  দফতরের ভেতরে হাতে গোনা দুই থেকে তিনজন কর্মীকেই দেখা যায়। 
তাহলে জেলায় কি বিজেপির ভাঙন শুরু হলো ? এমনটাই মনে করছে জেলা তৃনমূল নেতৃত্ব।
বিজেপি জেলা নেতৃত্ব বলছেন, দলে মুকুলায়ন শুরু হয়েছিল। মুকুল তৃণমূল ফিরতেই তাঁর অনুগামীদের অনেকেই সেদিকে পা বাড়িয়েছেন। 
বিজেপির জেলার সহ সভাপতি অলোক চক্রবর্তী বলেছেন, বিজেপি একটা বটগাছ। মুকুল এসেছিল, ফোটেনি, ঝরে গিয়েছে। পার্টিতে মুকুলায়ন হতে গিয়েছিল। যার জন্য মুকুলবাবুর মতো লোকজন এসে ভিড় জমিয়েছিল জেলা দফতরে। এখন মুকুলবাবু চলে গেলেন নিজের জায়গায়। তার সাথে সাথে তারাও ওই ঘরে ব্যাক করার জন্য লাইন দিয়েছে। ওরা আমাদের দায়িত্বশীল কার্যকর্তা কোনও দিনই ছিল না। স্বার্থ ও পাওয়ার আশাতেই তাঁরা দলে এসেছিলেন। তাঁরা এমনকি কোনও পদেও ছিলেন না। যাঁরা পদে আছেন তারা মাঠে ময়দানে নেমেছেন মানুষের পাশে থেকে কোভিড মহামারি মোকাবিলার জন্য।
তৃণমূলের জেলার মুখপাত্র দুলাল দেবনাথ জানান,  জলপাইগুড়ি বিজেপির জেলা কার্যালয় শুধু বন্ধ নয় খোলার লোক থাকবে না। নির্বাচন ঘোষণার পরেই বিজেপির প্রার্থী নিয়ে বিজেপির কর্মীরাই ব্যাপক ভাঙচুড় করেছিলো।  পার্টি অফিসে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলো।  আমরাই পুলিশ প্রশাসন দমকল পাঠিয়েছিলাম মানুষ সব দেখেছে জবাব ও দিয়েছে জলপাইগুড়ি জেলায়। 
জলপাইগুড়ি  জেলার তৃণমূল কংগ্রেস মুখপাত্র দুলাল দেবনাথের কটাক্ষ, জলপাইগুড়িতে বিজেপির জেলা কার্যালয় শুধু বন্ধ নয়, খোলার লোক থাকবে না। নির্বাচন ঘোষণার পরেই প্রার্থী নিয়ে বিজেপির কর্মীরাই ব্যাপক ভাঙচুর করেছিল।  পার্টি অফিসে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল।  আমরাই পুলিশ প্রশাসন দমকল পাঠিয়েছিলাম। শুধু মুকুলবাবুর অনুগামী নয়, যারা মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়নে সামিল হতে চায়, তারাও আসবার জন্য জেলা সভাপতি ও আমাদের মাধ্যমে যোগাযোগ করছে।