উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, অরিত্রিক ভট্টাচার্য, কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, কলকাতা: ইদে ছুটি থাকলেও, রামমন্দিরের শিলান্যাসে লকডাউন। রাজ্যে এসে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ফের তোষণের রাজনীতির অভিযোগে সরব বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা। পাল্টা বহিরাগত তত্ত্বে গেরুয়া শিবিরকে আক্রমণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। কেন্দ্রীয় প্রকল্প থেকে কৃষকস্বার্থ নিয়েও তরজায় শাসক-বিরোধী শিবির।


বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের বঙ্গ সফরে যে ঘটনা ঘটে, এবারও তার ব্যতিক্রম হল না। তৃণমূলের বিরুদ্ধে ফের একবার তোষণের রাজনীতির অভিযোগে মঙ্গলবার সরব হন নাড্ডা। তিনি বলেন, ‘এখানে তুষ্টিকরণের রাজনীতি হচ্ছে। ৩০ জুলাই ইদের ছুটি আর ৫ অগাস্ট রাম মন্দিরের শিলান্যাসের দিন লকডাউনের ঘোষণা করা হয়েছে এখানে। ইদের ছুটি নিয়ে আমার আপত্তি নেই। আমরাও চাই ইদে সবাই খুশি থাকুক। কিন্তু লকডাউনে আমাদের সাংসদদের ঘরবন্দি করে রাখা হয়েছে।’

পাল্টা মমতার তোপ, ‘বাইরে থেকে আরএসএস নিয়ে এসেছে। তারা মতুয়াদের ধর্ম সম্পর্কে শেখাচ্ছে। হিন্দু ধর্ম কী তা স্বামী বিবেকানন্দের থেকে শিখব। তোমরা কোন হরিদাস? পাড়ায় পাড়ায় বহিরাগত দেখলে এফআইআর করবেন। না নিলে আমাদের কার্যালয়ে জানাবেন।’

হিংসা-হানাহানি এবং দুর্নীতির অভিযোগেও তৃণমূল সরকারকে বেঁধেন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি। তিনি বলেন, ‘বাংলায় এসে আমার দুঃখও হয়, লজ্জাও লাগে। যে বাংলা সোনার বাংলা ছিল, সেই বাংলাকে দুর্নীতি-ভাই-ভাজিতাবাদ গ্রাস করেছে। আমাদের ১৩০ জন কর্মীকে খুন করা হয়েছে। আমি তর্পণ করেছি। এটা কী হচ্ছে? যে রাজ্যে মতাদর্শের লড়াই বন্ধ হয়ে যায়, হিংসা শুরু হয়ে যায়, ধরে নেওয়া যায় সেখানে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়ে গেছে।’

অন্যদিকে, চাল থেকে আলু, নানা বিষয়ে মোদি সরকারকে কড়া আক্রমণ করেছেন মমতা। পাল্টা এ রাজ্যে কেন কৃষক সম্মান নিধি যোজনা কিংবা আয়ুষ্মান যোজনা চালু করা হয়নি, সেই প্রসঙ্গ তুলেছেন নাড্ডা।

মমতার তোপ, ‘আমরা চাষিদের থেকে প্রচুর চাল কিনি। কিন্তু কেন্দ্র অন্য রাজ্য থেকে বেশি চাল কেনে, আর আমাদের রাজ্য থেকে কম কেনে। আমার চাষিরা প্রচুর ধান উৎপাদন করে আপনারা জানেন এরা কী করে? কেন্দ্রের একটা ফুড কর্পোরেশন আছে। এর নাম বিজেপি সরকার। আপনারা কেঁদে বেড়াবেন, আলুসিদ্ধ-ভাতও খেতে পাবেন না। আর বিভিন্ন কোম্পানির লোক আসবে, তারা কিনে নিয়ে যাবে আর বেশি দামে বিক্রি করবে। এগুলো কোনওটাই আর অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নয় আজ কী হয়েছে জানেন? আপনার আলু আপনি রাখতে পারবেন না, আপনার চাল আপনি রাখতে পারবেন না আমরা চাষিদের কাছ থেকে আলু কিনতাম, যখন আলুর দাম বাড়ত আমরা সাধারণ মানুষকে কম দামে দিতাম। কৃষকের নিরাপত্তা থাকবে না, তাই সারা দেশে আলোচনা চলছে। না হলে কৃষকরা যা ফসল ফলায় সব নিয়ে যাবে কালোবাজারি, মুনাফাখোর, মজুতদাররা নিয়ে চলে যাবে।’

দেশের বিভিন্ন রাজ্যের কৃষকরা যখন দিল্লির সীমানায় মোদি সরকারের কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে য়াচ্ছে, তখন বাংলায় এসে কৃষক ইস্যুতে মমতা সরকারকে আক্রমণ করেছেন নাড্ডা। তাঁর দাবি, ‘বাংলায় কৃষকদের অবস্থা খারাপ। এর জবাব মমতা সরকার পাবে।’

সবমিলিয়ে ভোট যত এগিয়ে আসছে বাগযুদ্ধ তত তুঙ্গে উঠছে।