সিউড়ি: বিয়ে ভাঙতে ভাঙতে বেঁচে গেল। আর বাঁচাল, বিয়ে ভাঙতে ক্ষুব্ধ দম্পতিরা যার দ্বারস্থ হন, সেই বিচারবিভাগ। সিউড়ির গৌতম ও অহনা দাসকে নতুন করে সংসারে ফিরিয়ে দিলেন বিচারক পার্থসারথি সেন।


মাত্র ১১ মাসের বিয়ে। কিন্তু তিক্ততা এমন জায়গায় পৌঁছয়, যে দু’জনেই বিবাহ ভাঙার সিদ্ধান্ত নেন। জল গড়ায় আদালত পর্যন্ত। সব শুনে টুনে সিউড়ি জেলা আদালতের বিচারক পার্থসারথি সেন নির্দেশ দেন, দু’জনকে একসঙ্গে তিনদিন হোটেলে কাটাতে হবে। তারপর জানাতে হবে, তাঁরা একসঙ্গে থাকতে চান কিনা।

তিনদিন হোটেলে কাটানোর পর শুক্রবার আদালতে হাজির হন গৌতম-অহনা। বিচারক তাঁদের কাছে জানতে চান, তোমরা একসঙ্গে থাকবে না কি আলাদা হয়ে যাবে? তিন দিন আগেও একে অপরের কার্যত মুখ দেখতে না চাওয়া গৌতম-অহনা একসঙ্গে জানান, আমাদের সমস্যা মিটে গিয়েছে। একসঙ্গে থাকতে চাই।

বিচারক দু’জনকে তখন বলেন, হাতে হাত ধরে প্রতিজ্ঞা কর, দু’জন দু’জনকে কখনও ছাড়বে না। গৌতম-অহনা এজলাসেই হাতে হাত ধরে জানান, কোনওদিন একে অপরকে ছাড়বেন না।

এইসময় গৌতমের বাবা বলেন, বউমা বড্ড ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপ করে, ওটা বন্ধ করতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে বিচারক বলেন, থ্রি ইডিয়টস সিনেমার কথা মনে আছে। তাতে ফরহান চেয়েছিলেন, ফটোগ্রাফার হতে আর তাঁর বাবা চেয়েছিলেন ছেলে ইঞ্জিনিয়র হোক। শেষপর্যন্ত ফরহান কিন্তু ফটোগ্রাফার হয়েই সফল হয়েছিলেন। তাই কারও মনের ইচ্ছা দমানো উচিত নয়।

এই সময় স্ত্রী অহনা বলেন, গৌতম বলেছে আর কোনওদিন আমার বাবার বাড়িতে যাবে না। বিচারক তখন গৌতমকে বলেন, এরকম কোরো না। তাতে স্ত্রীর মনে আঘাত লাগবে।

এই যুবক যুবতীর বাবা মাদেরও এজলাসে ডেকে হাত ধরতে বলেন বিচারক। তারপর দাস দম্পতির উদ্দেশে বলেন, ২৫-৩০ বছর বাদে তোমাদের মনে হত, কেন বিচারক সেইসময় আমাদের দু’জনের মিটমাটের চেষ্টা করলেন না। তাহলে আমাদের সম্পর্কটা বেঁচে যেত। জীবনটা শুধু গোলাপের শয্যা নয়, কাঁটা আছে। সেটা সরিয়ে বাঁচতে হবে।

বিয়ের এগারো মাসের মাথায় যেন নতুন করে বৈবাহিক জীবন শুরু হল বছর পঁচিশের গৌতম এবং অহনার। গৌতম এবং অহনা সিউড়ির যে হোটেলে তিনদিন ছিলেন, সেখানে মোট বিল হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। পুরোটাই দিয়েছেন ওই বিচারক।