কংগ্রেসের ৪৪ জন বিধায়ককে ১০০ টাকার নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প পেপারে সই করে মুচলেকা দিয়ে জানাতে হয়েছে, দলের সমস্ত সিদ্ধান্ত মেনে চলবেন। দলের প্রতি অনুগত থাকবেন। মুচলেকায় বলা হয়েছে, আগামী দিনে সনিয়া গাঁধী এবং রাহুল গাঁধীর নেতৃত্বাধীন জাতীয় কংগ্রেসের প্রতি অনুগত থাকব। দলের সমস্ত সিদ্ধান্ত মেনে চলব। বিধানসভায় মুখ্য সচেতক যে নির্দেশ দেবেন, তাই পালন করব। প্রকাশ্যে দল বিরোধী কোনও কথা বলব না। দলের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করতে হলে বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে করব।
কংগ্রেস বিধায়কদের এই মুচলেকা ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে জাতীয় স্তরেও। বিজেপির গলায় কটাক্ষের সুর। এদিন দলের কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় বলেন, কংগ্রেস নেতাদের মধ্যে এতটাই অবিশ্বাস রয়েছে যে তা দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে বিভ্রান্ত করে তুলেছে। তিনি যোগ করেন, কংগ্রেসের এতটাই দুর্ভাগ্য যে, দলের নেতাদের বিশ্বাস করার জন্য ১০০ টাকার স্ট্যাম্প পেপারের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। তিনি মনে করেন, এটা দাসত্ববৃত্তির প্রতীক। আর সেটা কংগ্রেসই করতে পারে।
উল্টোদিকে দলের প্রতি আনুগত্য দেখাতে গিয়ে বাংলার বিধায়করা যা করেছেন, তাতে আপত্তির কিছু নেই বলেই মনে করছে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড। দলের মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সূরযেওয়ালা বলেন, যেভাবে বিজেপি অরুণাচল প্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডে দলের বিধায়ককে ছিনিয়ে নিয়ে সেখানকার সরকার ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করেছে, তাতে এই পন্থা নিতে হয়েছে।
২০১১ সালে তৃণমূলের সঙ্গে জোট বেঁধে লড়েছিল কংগ্রেস। সেবার তারা ৪২টি আসনে জেতে। কিন্তু, গত পাঁচ বছরে বার বার কংগ্রেসের ঘর ভেঙেছে। কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল শিবিরে যোগ দেন ১১ জন বিধায়ক। এর মধ্যে মাত্র ২ জন, বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। এবার কংগ্রেসের ৪৪ জন বিধায়ক। তাঁদের ধরে রাখতে মরিয়া প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব। সেই মতো নবর্নির্বাচিত বিধায়কদের দিয়ে মুচলেকা লিখিয়ে কার্যত শপথ করিয়ে নিল বিধানভবন। এমনটাই মত পর্যবেক্ষকদের একাংশের।
অভিনব হলেও মুচলেকা সংস্কৃতি অবশ্য কংগ্রেসে বিরল নয়। প্রায় সাড়ে তিন দশক আগে, লোকসভা নির্বাচনে সাংসদ পদে টিকিট দেওয়ার আগে দলীয় প্রার্থীদের প্রতিজ্ঞাপত্রে সই করিয়ে নিয়েছিলেন ইন্দিরা গাঁধী। প্রতিজ্ঞা করতে হয়েছিল জিতে এসে দলের সব সিদ্ধান্ত মেনে চলবেন তাঁরা। ৩৫ বছর পর, এবার কার্যত সেই পথেই হাঁটল প্রদেশ কংগ্রেস।