জলপাইগুড়ি ও কলকাতা: জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়ির স্কুলকাণ্ডে বেরিয়ে আসছে একের পর চাঞ্চল্যকর তথ্য। ৪ বস্তা উত্তরপত্র থেকে উধাও ১০০টি খাতা! ময়নাগুড়ি সার্কলের স্কুল পরিদর্শক বিশ্বনাথ ভৌমিকের দাবি, ময়নাগুড়ি সুভাষনগর হাইস্কুলে এবার ৪ বস্তা উত্তরপত্র পাঠানো হয়।
কিন্তু প্রধান শিক্ষক পরে জানান, ১০০টি খাতা কম রয়েছে। এজন্য ফের উত্তরপত্র পাঠানো হয়। কিন্তু কোথায় গেল ১০০টি খাতা? প্রশ্ন তুলেছেন স্কুল পরিদর্শক। উধাও উত্তরপত্রে উত্তর লিখিয়ে ঢোকানো হয়নি তো প্যাকেটে? উঠছে প্রশ্ন। অভিযোগ অস্বীকার করে বোর্ডের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন প্রধান শিক্ষক।

পরীক্ষা শুরুর আগেই মাধ্যমিকের প্রশ্নের উত্তর পৌঁছে গিয়েছে ক্লাসে ফার্স্ট বয়ের কাছে। আর তা পৌঁছে দিয়েছেন খোদ স্কুলের প্রধান শিক্ষক। এমনই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়ির সুভাষনগর হাইস্কুলে। স্কুলের অন্য শিক্ষকদের দাবি, স্কুলের অন্তত ৫ শিক্ষক জড়িত এই ঘটনায়।
এক অভিযোগকারী শিক্ষক বলেন, ১০টা ৩০-এ প্রশ্ন খোলা হয়। সুপারভাইজারকে পান আনতে পাঠিয়ে হরিদয়াল রায় প্যাকেট খোলেন। একাধিক শিক্ষক জড়িত। শিক্ষিকার বাড়িতে অংক করা হয়েছে। ৫ শিক্ষক সরাসরি জড়িত। পরীক্ষা শুরুর আগেই ফার্স্টবয়কে ফোনে উত্তর বলে দেওয়া হতো। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।

ঘটনার প্রেক্ষিতে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের তরফে প্রধান শিক্ষক ও দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকদের শুক্রবার তলব করা হয়েছে। দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি করেছেন অভিভাবকরা।
এদিকে, ময়নাগুড়িকাণ্ডে কড়া অবস্থান সরকারের। মাধ্যমিকে জালিয়াতির অভিযোগ প্রমাণিত হলে ফেরত নেওয়া হবে অভিযুক্ত হরিদয়াল রায়ের শিক্ষারত্ন সম্মান। স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। সরকারের পাশাপাশি এবার কড়া পদক্ষেপ উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের। শাস্তির মুখে ময়নাগুড়ির সুভাষনগর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক হরিদয়াল রায়।

আগামী ২৭ তারিখ থেকে শুরু হচ্ছে এ বছরের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা। পরীক্ষা কেন্দ্র হয়েছে ময়নাগুড়ির সুভাষনগর হাইস্কুলও। সংসদ সভাপতি মহুয়া দাস জানিয়েছেন, মাধ্যমিকে জালিয়াতির অভিযোগে তদন্ত শুরু হয়েছে। শুক্রবার ডাকা হয়েছে শুনানিতে। তাই উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার যাবতীয় দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে হরিদয়াল রায়কে। পরিবর্তে দায়িত্ব নেবেন সহকারী প্রধান শিক্ষক। হরিদয়াল রায় যদি প্রধান পরীক্ষক হন, তা হলে তাঁকে সেই দায়িত্বেও রাখা হবে না। পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢুকতেই পারবেন না তিনি।

মধ্যশিক্ষা পর্ষদের তৃণমূল অনুগামী কর্মচারি সমিতি এদিন শিক্ষামন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিয়ে দাবি জানিয়েছে, ময়নাগুড়িকাণ্ডের তদন্ত হোক সরকারি পর্যায়ে। তদন্তের আওতায় রাখা হোক মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে। তৃণমূল অনুগামী কর্মচারি সমিতির প্রশ্ন, পর্ষদ দাবি করেছিল, এবার এমন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, যাতে কোথাও নির্দিষ্ট সময়ের আগে প্রশ্নপত্রের প্যাকেট খুললে জানতে পারবে পর্ষদ। ময়নাগুড়ির ঘটনা পর্ষদ কখন জানতে পেরেছে?
যদিও এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে চায়নি মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। এই প্রেক্ষিতে আগামী শুক্রবার পর্ষদের শুনানিতে কী হয়, সেদিকেই তাকিয়ে বিভিন্ন মহল।