মহেশতলা: ইচ্ছে থাকলে শান্তিপূর্ণ ভোট করানো যায়। মানুষ নিশ্চিন্তে নিজের ভোট নিজে দিতে পারে। হিংসাবিধ্বস্ত পঞ্চায়েত ভোটের দু’সপ্তাহের মধ্যেই তা দেখিয়ে দিল মহেশতলার উপনির্বাচন। সোমবার সকাল থেকেই রাস্তায় এবং বুথে চরকিপাক খেল কেন্দ্রীয় বাহিনী। বুথের ভিতর অশান্তি এড়াতে তৈরি হল বাঙ্কার। নির্বিঘ্নে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করলেন সাধারণ মানুষ। ঠিক যেমনটা হওয়া উচিত।
কিন্তু, দু’সপ্তাহ আগে পঞ্চায়েত ভোটেই এমনটা হয়নি। মহেশতলা বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের সঙ্গে সেই ভোটের ছিল আকাশ পাতাল ফারাক।
পঞ্চায়েত ভোটে বুথের বাইরে মোতায়েন ছিলেন লাঠিধারী পুলিশ এবং সিভিক ভলান্টিয়াররা।
মহেশতলা উপনির্বাচনে বুথের বাইরে একে ফিফটি সেভেন হাতে পাহারা দিতে দেখা গেল কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের।
পঞ্চায়েত ভোটের দিন লাঠিধারী পুলিশ ও সিভিক ভলান্টিয়ারদের কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বুথ দখল, ছাপ্পাভোট চালায় বহিরাগতরা।
কিন্তু, সোমবার পরিচয়পত্র না দেখে কাউকে ভিতরে ঢুকতে দেননি কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা।
পঞ্চায়েত নির্বাচনে বুথের মধ্যে অবাধে ছাপ্পা দিতে দেখা গিয়েছিল....
মহেশতলা উপ নির্বাচনে বুথের ভিতরে তো দূরের কথা, ধারেকাছেও ঘেঁষতে পারেনি বহিরাগতরা। মহেশতলার একটি বুথ থেকে বেশ কিছুটা দূরে জড়ো হয়েছিলেন তৃণমূলের কর্মীরা। তাঁরাই স্বীকার করে নিলেন, এদিন কোনও কাজ নেই।
পঞ্চায়েত ভোটের দিন পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ার একটি বুথে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে ঢুকে পড়েন এক যুবক। চোখের সামনে এই দৃশ্য দেখেও কার্যত অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় কর্তব্যরত পুলিশকর্মীকে।
মহেশতলা উপনির্বাচনে দেখা গিয়েছে সম্পূর্ণ উল্টো ছবি। আক্রা হাই মাদ্রাসার স্পর্শকাতর বুথে অশান্তি এড়াতে বাঙ্কার তৈরি করেছেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা। যে ধরণের বাঙ্কার কাশ্মীরে দেখা যায়, একেবারে ভোটকেন্দ্রে সেরকম বাঙ্কার!
শুধু বুথের সামনে নয়। মাদ্রাসার প্রাঙ্গন থেকে দোতলার বারান্দা, যেদিকে চোখ যায়, সেদিকেই ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনী।
পঞ্চায়েত ভোটের দিন আইনশৃঙ্খলা সামলাতে যাঁরা হিমশিম খেয়েছিলেন, সেই রাজ্য পুলিশের কয়েকজন কর্মীকে এদিন দেখা গিয়েছে বাটানগরে গঙ্গার পাড়ে বসে মেজাজে হাওয়া খেতে।
এমন শান্তিপূর্ণ ভোট দেখে খুশি ভোটাররা।
শুধু ভোটাররা নন, শান্তিপূর্ণ আবহে ফুরফুরে মেজাজে ছিলেন প্রার্থীরাও। পঞ্চায়েত ভোটে যেখানে বিভিন্ন জায়গায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ উঠেছিল, এদিন সেখানে তৃণমূল প্রার্থী দুলাল দাসকে দেখা গেল বিজেপি প্রার্থীর কাছে সুবিধা-অসুবিধার খোঁজ নিতে।
যা দেখে অনেকে বলছেন, এমন ভোট হওয়াই তো কাম্য। যদি কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন এভাবে অবাধ ভোট করাতে পারে, তাহলে রাজ্য নির্বাচন কেন পারল না?
তৃণমূল বিধায়ক কস্তুরী দাসের মৃত্যুর কারণে হয়েছে এই উপনির্বাচন। এবার তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন কস্তুরী দাসের স্বামী দুলাল দাস যিনি মহেশতলা পুরসভার চেয়ারম্যান। উল্টোদিকে বিজেপির হয়ে দাঁড়িয়েছেন প্রাক্তন সিবিআই কর্তা সুজিত ঘোষ। সিপিএম প্রার্থী প্রভাত চৌধুরী বর্তমানে ডিওয়াইএফআই-এর রাজ্য কোষাধ্যক্ষ।
গত বিধানসভা নির্বাচনে মহেশতলা কেন্দ্রে তৃণমূল পেয়েছিল ৯৩,৬৭৫ ভোট। সিপিএম পেয়েছিল ৮১,২২৩টি ও বিজেপি ১৪,৯০৯টি ভোট।
পঞ্চায়েত ভোটের কথা মাথায় রেখে, সুষ্ঠুভাবে উপনির্বাচন শেষ করতে মোট ১০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী এসেছে। রাস্তা ও ভোটকেন্দ্রে ছিলেন ৯ কোম্পানির বাহিনী। প্রতি বুথে ৪-৫ জন আধাসেনা ও একজন লাঠিধারী পুলিশ । মোবাইল পেট্রোলিং ভ্যান ছিল ৮টি, ৫টি কুইক রেসপন্স টিম। ৯টি পয়েন্ট চলে নাকা চেকিং।
কেন্দ্রীয় বাহিনীর নজরদারিতে নির্বিঘ্নে মহেশতলা বিধানসভা আসনের উপনির্বাচন
ABP Ananda, Web Desk
Updated at:
28 May 2018 07:54 AM (IST)
ফাইল ছবি
NEXT
PREV
রাজ্য (states) লেটেস্ট খবর এবং আপডেট জানার জন্য দেখুন এবিপি লাইভ। ব্রেকিং নিউজ এবং ডেইলি শিরোনাম দেখতে চোখ রাখুন এবিপি আনন্দ লাইভ টিভিতে ।
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -