কালিয়াচক(মালদা): যত সময় গড়াচ্ছে কালিয়াচক হত্যাকাণ্ডে উঠে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। 


পুলিশ সূত্রে খবর, গুলি করেই পরিবারের সদস্যদের খুনের পরিকল্পনা ছিল মূল অভিযুক্ত আসিফের। কিন্তু, আওয়াজ হবে বলে পরে সেই পরিকল্পনা বাতিল করে সে। পুলিশের দাবি, জেরায় এমনটাই জানিয়েছে আসিফ মহম্মদ। 


পুলিশের আরও দাবি, জেরায় আসিফ জানিয়েছে, ফেব্রুয়ারি মাসের আগেও সে একবার গোটা পরিবারকে হত্যার ছক কষেছিল। পুলিশ এ-ও জানিয়ছে, জেরায় আসিফ জানিয়েছে, হত্যার পরিকল্পনা অঙ্গ হিসেবে সে গুদামের গাঁথনি পুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। লক্ষ্য ছিল, যাতে কোনোভাবে কেউ কিছু জানতে না পারে। এমনকী, গুদামঘরে জানলাও রাখা হয়নি। 


এদিকে, অভিযুক্তের দাদা আরিফ মহম্মদকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আসিফ সম্পর্কে পুলিশ জানতে পেরেছে আরও একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য। পুলিশ সূত্রে খবর, দাদার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কিশোর বয়স থেকেই অপরাধমনস্ক ছিল আসিফ মহম্মদ। 


আরিফ পুলিশকে জানিয়েছে, অষ্টম শ্রেণীতে পড়ার আগে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিল আসিফ। বাড়ি থেকে পালিয়ে পরে বাবাকে ফোন করে ব্ল্যাকমেল করতে থাকে। বলে, যদি বাবা তাঁকে ফোন, ল্যাপটপ, ক্যামেরা না কিনে দেয় তাহলে সে বাড়ি ফিরবে না। পরে বাবা কিনে দিলে সে বাড়ি ফিরে আসে।


শুধু তাই নয়। এরপর দ্বিতীয়বার নিজেকেই নিজে অপহরণের গুজব রটিয়ে বাড়িতে ফোন করে মুক্তিপন বাবদ টাকা হাতিয়েছিল বাবার কাছ থেকে। বাবা টাকা দিলে সে বাড়ি আসে।


ঘটনার পর থেকেই তদন্তকারীরা বলছেন, অনুশোচনাহীন, একেবারে নির্লিপ্ত আসিফকে এখনও ভেঙে পড়তে দেখা যায়নি। না রাগ আছে, না অনুশোচনা। দাদা আরিফের সঙ্গে একাধিবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে আসিফকে। 


এক পুলিশ অফিসার জানান, এত আবেগহীন ক্রিমিনাল এখনও পর্যন্ত এই বয়সে কাউকে দেখেননি তাঁরা। বিশেষ করে পরিবারকে নিকেশ করার পরেও একটুও আবেগতাড়িত হতে দেখা যায়নি আসিফকে।


পুলিশের দাবি, মা-বাবা-বোন ও ঠাকুমা খুনে অভিযুক্ত আসিফের মধ্যে অনুশোচনার লেশমাত্র নেই। জেরা চলাকালীন ১৯ বছরের তরুণের নির্লিপ্তভাব তদন্তকারীদেরও ভাবিয়ে তুলেছে। 


এমনকী, বারবার তদন্তকারীদের বিভ্রান্তও করছে আসিফ। পুলিশ সূত্রে খবর, এত অস্ত্র কীভাবে, কাদের কাছ থেকে আনা হয়েছিল, জেরায় সেই প্রশ্নে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উত্তর দিচ্ছে আসিফ। 


কখনও তদন্তকারীদের জানিয়েছে, এসব অস্ত্র তার বাবা কিনে দেন। কখনও আবার দাবি করেছে, বন্ধুর কাছ থেকে সে অস্ত্রগুলি পেয়েছে। 


পুলিশ সূত্রে খবর, জেরায় আসিফ একসময় দাবি করে, সব অস্ত্র সে পাগলা সেতু থেকে নদীতে ফেলে দিয়েছে। তবে শেষপর্যন্ত জেরায় আসিফ জানায়, অস্ত্র রয়েছে বন্ধু সাব্বির আলির বাড়িতে। পরে সেখান থেকেই উদ্ধার হয় অত্যাধুনিক অস্ত্র, কার্তুজ।