কলকাতা: তৃণমূলের কোর কমিটির বৈঠক থেকে নাম না করে বিজেপিকে নিশানা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। শনিবার বৈঠকে তাঁর বার্তা, উস্কানিমূলক ও বিভেদমূলক শক্তির বিরুদ্ধে সজাগ থাকতে হবে।

রাজনৈতিক মহলের অভিমত, ২০১৯ টার্গেট করে তৎপর বিজেপি-আরএসএস। তার মোকাবিলায় এবার ঝাঁপিয়ে পড়ল তৃণমূলও। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বাংলায় ঝাঁপিয়ে পড়ছে দেখেই কি তৃণমূল নেত্রী দলকে সজাগ থাকার নির্দেশ দিচ্ছেন? কারণ, পয়লা বৈশাখের আগেই রাজ্যে আসছে বিজেপি সাংসদ, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সহ ৪০ জনের একটি দল। তালিকায় রয়েছেন রাজনাথ সিংহ, উমা ভারতী, স্মৃতি ইরানি, রবিশঙ্কর প্রসাদ, পুনম মহাজন, মনোজ সিংহ, অর্জুন রাম মেঘওয়াল, মহেন্দ্রনাথ পান্ডে, সন্তোষ গাঙ্গোয়ার, এম জে আকবর, জয়ন্ত সিনহা প্রমুখ বিজেপি নেতা, নেত্রীরা।



বিজেপি সূত্রে দাবি, ৬ থেকে ১৪ এপ্রিলের মধ্যে তাঁরা ৪২টি লোকসভা কেন্দ্রে ঘুরবেন। প্রত্যেকে একটি করে লোকসভার দায়িত্ব নিয়ে সেখানে কর্মী-বৈঠক করবেন। এর মধ্যে দক্ষিণ কলকাতায় বৈঠক করবেন রাজনাথ। কলকাতা উত্তরে দায়িত্ব পেয়েছেন স্মৃতি ইরানি। অর্থাৎ, মোদি-অমিত শাহের মিশন-বাংলা স্পষ্ট। কারণ, রাজ্যের ৪২টি লোকসভার মধ্যে আপাত মাত্র দু’টিই বিজেপির দখলে। উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, গুজরাত, ছত্তীসগঢ়ের মতো রাজ্যে ২০১৪-র ভোটে বিজেপি এত আসনে জিতেছে, যে আর সেসব জায়গায় আর বাড়ার সুযোগ নেই। তাই, ২০১৯-এ তাদের লক্ষ্য বাংলা, ওড়িশার মতো রাজ্য! তৃণমূল প্রকাশ্যে অবশ্য বিজেপির এই ঝাঁপিয়ে পড়াকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ৪০ জন আসুক, ৪০০ জন আসুক, মানুষ মমতাকেই সমর্থন করবে।

কিন্তু, রাজনীতির পোক্ত খেলোয়াড়রা কখনওই প্রতিপক্ষকে খাটো চোখে দেখে না! তাই ইতিমধ্যেই রণকৌশল সাজাতে শুরু করে দিয়েছেন মমতা । এবিপি আনন্দর মুখোমুখি হয়ে সম্প্রতি তিনি বলেন, ওরা বাংলাকে চ্যালেঞ্জ করলে আমরা কি লবেনচুস খাব নাকি। আমরা দিল্লিকে টার্গেট করব। অন্য রাজ্যে ভোটে লড়ব।
শনিবার কোর কমিটির বৈঠকেও মমতা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, দেশে যেসব রাজ্যে আঞ্চলিক শক্তি দুর্বল বা যেখানে তৃণমূলের প্রভাব বাড়ানোর মতো পরিস্থিতি রয়েছে, সেই রাজ্যগুলিকে আগে টার্গেট করতে হবে। পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে টিএমসি-র দায়িত্ব বেড়ে গেছে। সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তৃণমূল সূত্রে খবর, সাংগঠনিক স্তরে বেশ কিছু রদবদলও করেছেন তৃণমূলনেত্রী। ওড়িশার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সুব্রত বক্সী, শুভেন্দু অধিকারী ও মানস ভুঁইয়াকে। ত্রিপুরার দায়িত্বে মুকুল রায়। ঝাড়খণ্ডের দায়িত্বে পূর্ণেন্দু বসু ও শ্রীকান্ত মাহাতো। ধানবাদে মলয় ঘটক, জিতেন্দ্র তিওয়ারি এবং সিকিমের দায়িত্বে অরূপ বিশ্বাস।
তবে, ভিন রাজ্যে দলকে ছড়ানোর চেষ্টা চালালেও তৃণমূলের মূল লক্ষ্য যে বাংলার দুর্গ অটুট রাখা তা কিন্তু স্পষ্ট। আর সে কারণেই সামনের বছরের পঞ্চায়েত ভোট এবং ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের কথা মাথায় রেখে বিজেপির বিরুদ্ধে মানুষের কাছে নিজেদের বার্তা পৌঁছে দিতে লিফটেল বিলিও শুরু করছে তৃণমূল।