কলকাতা: একইদিনে উত্তরবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অমিত শাহ। কোচবিহার থেকে নকশালবাড়ি। দূরত্ব ১৬০ কিলোমিটার। মঙ্গলবার মমতা যখন কোচবিহারে, তখন অমিত শাহ থাকবেন নকশালবাড়িতে! মুখ্যমন্ত্রী সভা করবেন কোচবিহার শহরে। আর বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতির ‘বুথ চলো’ কর্মসূচি নকশালবাড়িতে। দুই হেভিওয়েটের মুখোমুখি হওয়ার একদিন আগে থেকেই রাজনৈতিক উত্তাপ স্পষ্ট টের পাওয়া যাচ্ছে উত্তরবঙ্গে।
বিজেপি সূত্রে দাবি, মঙ্গলবার সকাল এগারোটা নাগাদ শিলিগুড়িতে পৌঁছবেন অমিত শাহ। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ তিনি যাবেন নকশালবাড়ি। নকশালবাড়ি পঞ্চায়েতে বিজেপির একমাত্র পঞ্চায়েত সদস্য সাধনা মণ্ডলের এই তিনতলা বাড়িতে উঠবেন অমিত শাহ। কথা বলবেন স্থানীয় বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতিকে অভ্যর্থনা জানানোর প্রস্তুতি অবশ্য শুরু হয়ে গিয়েছে।
কিন্তু, সফর শুরুর জন্য অমিত শাহ নকশালবাড়িকেই বেছে নিলেন কেন? দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া বললেন, গ্রামটার নাম সারা বিশ্ব জানে। রাজনৈতিক ইতিহাস আছে। সবাই চেনে। সদস্যও আছে।
তৃণমূল অবশ্য অমিত শাহর এই কর্মসূচিকে কোনও গুরুত্বই দিতে নারাজ। দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, কী হবে অমিত শাহ এলে? মাটি পেতে গেলে যে আন্দোলন দরকার, তার নাম মমতা। পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, অমিত শাহর লক্ষ্য শুধু তৃণমূল নয়। তাঁর নজরে রয়েছে বাম ভোট ব্যাঙ্কও। সেই জন্যই তিনি বেছে নিয়েছেন সশস্ত্র বাম আন্দোলনের আঁতুড়ঘর নকশালবাড়িকে।
এই প্রেক্ষাপটে বিজেপিকে পাল্টা আক্রমণ শানিয়েছে বামেরাও। দার্জিলিং সিপিএম জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকার বলেন, সাংগঠনিক ভিত্তি নেই। নকশালবাড়িতেও ভিত্তি নেই।
মঙ্গলবার বিকেলে শিলিগুড়ি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে বিদ্বজ্জনদের সঙ্গে বৈঠক করবেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি। রাতে বিজেপির কর্মকর্তাদের সঙ্গে নৈশভোজ সেরে পদাতিক এক্সপ্রেস ধরে আসবেন কলকাতা।
এখানে একেবারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিধানসভা কেন্দ্র ভবানীপুরে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যাওয়ার কথা মোদীর সেনাপতির। দলের সাধারণ সম্পাদক সুভাষ সরকার বলেন, অমিত শাহর পাখির চোখ পশ্চিমবঙ্গ। কলকাতায় কর্মসূচি। ভবানীপুরে বুথকর্মীদের সঙ্গে কথা। সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা। বিকেলে মহাজাতি সদনে বিদ্বজ্জনদের দিয়ে কথা।
তৃণমূলের অবশ্য এসবকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। একদিন দু’দিনে এসব করা যায় না। রাজনীতিতে মাথায় চাপিয়ে দিয়ে কিছু হয় না। সেবার মাধ্যমে লিডার তৈরি হয়। অতিথি হিসেবে আসবে, চলে যাবে। সুস্থ জীবন কামনা করি।
মঙ্গলবার কোচবিহারে মুখ্যমন্ত্রীর দু’টি সভা রয়েছে। প্রথমটি চকচকায়। তারপর রাসমেলার মাঠে কামতাপুর পিপলস পার্টির সভায় তাঁর বক্তৃতা করার কথা। গতবছর নভেম্বরের উপনির্বাচনে কোচবিহারে বিজেপির ভোটের হার বেড়েছে। এই প্রেক্ষিতে কোচবিহারে দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী বলেন, সেদিকেও নজর থাকবে রাজনৈতিক মহলের।