কোচবিহার: বিজেপি যদি ভাবে পুরো দিল্লি বাংলায় এসে থাকবে, তাহলে যুদ্ধ হবে। চ্যালেঞ্জ মমতার।


বুধবার কোচবিহারের রাসমেলা ময়দানে কর্মিসভা করেন তৃণমূলনেত্রী। সেখানে তিনি বিজেপিকে খোলা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন। বলেন, বিজেপি যদি ভাবে পুরো দিল্লি বাংলায় এসে থাকবে, তাহলে চলে আসুন, যুদ্ধ হয়ে যাক। আপনার সঙ্গে গুন্ডা থাকবে, আমার সঙ্গে মানুষ।’ নেত্রী বলেন, ‘জোট বাঁধুন, তৈরি হোন, স্লোগানটা মনে রাখবেন -- আপনারা হাঁটুজলে নামলে, আমি মাথা পর্যন্ত জলে নামব।’


মমতা জানিয়ে দেন, বিজেপির কাছে কখনই মাথা নত করবেন না তিনি। বলেন, ‘বিজেপির কাছে মাথানত করব না। লোকসভা ভোটে আমরা আসন পাইনি, কিন্তু অভিমান নেই। কোচবিহারে ভোটার লিস্ট থেকে নাম বাদ দেওয়ার চেষ্টা। বহিরাগত গুন্ডারা রাজ্যে আসছে, এরা কারা? আমরা যত মত, তত পথে বিশ্বাস করি।’


বিরোধীদের উদ্দেশ্যে তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘তৃণমূল আগে ছোট্ট চারাগাছ ছিল, এখন দল বটবৃক্ষ। পাথরে পেরেক ঠুকলে ভেঙে যাবে। সবাইকে তো টিকিট দেওয়া সম্ভব নয়।’


মমতা জানান, ‘সারাক্ষণ কুৎসা, অপপ্রচার করে যাচ্ছে বিজেপি। বলেন, শস্যবিমা করেছি, কৃষকদের একটাকাও দিতে হয় না। অনেক কাজ করেছি, এবার আপনাদের কাছে চাওয়ার আছে।


মমতার দাবি, তাঁর সরকার যা প্রতিশ্রুতি দেয়, তা পূরণ করে। বলেন, মা-মাটি-মানুষের সরকার বিশ্বাসঘাতক নয়। আমরা যা প্রতিশ্রুতি দিই, তা করে দিই। তৃণমূলের নিচুতলার কর্মীরা দায়িত্ব নিন।


সম্প্রতি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা জাতীয় সঙ্গীত বদলানোর আবেদন করে কেন্দ্রকে চিঠি দিয়েছেন সুব্রহ্মণ্যম স্বামী। এই প্রসঙ্গে এদিন মমতা বলেন, ‘বলছে বিশ্বকবির লেখা জনগণমন তুলে দাও। যেন হাতের মোয়া, ক্ষমতা থাকলে তুলে দিয়ে দেখাও। বলছে রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে জন্মেছেন, একটুও জ্ঞান নেই।’


মমতার দাবি, সুব্রত-অনুব্রতর কাছে দলবদলের প্রস্তাব এসেছিল। বলেন, ‘সুব্রত বক্সির কাছে দলবদলের প্রস্তাব দিয়ে ফোন এসেছিল। দিল্লি থেকে অনুব্রতর কাছেও ফোন, বলেছে বসতে চাই।’


বিজেপিকে আক্রমণ করে মমতা বলেন, বলেছিল বছরে ২ কোটি বেকারকে চাকরি দেব, কোথায় গেল? এখন ফর্ম বিলি করছে, ওদের প্রতিশ্রুতি মানেই চিটিংবাজি। সব ভাঁওতাবাজি, এভাবে কারও চাকরি হয় না। বিমানবন্দর করলাম, কোচবিহারে বিমান নামল কই!’


এখানেই থেমে থাকেননি তিনি। বলেন, ‘এতদিনে কী দিয়েছে বিজেপি সরকার। আমরা সব করব, আর ওরা কৈফিয়ত চাইবে! খালি ভয় দেখাবে, ধমকাবে-চমকাবে। সকালে ঘুম থেকে উঠে বেরিয়ে পড়ল! বলছে ডিসেম্বরে ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও।’ মমতা যোগ করেন, ‘বিজেপি টাকা দিচ্ছে, ওই টাকা ছোঁবেন না।


কোচবিহার গত লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলকে উদ্ধৃত করে বিজেপিকে আক্রমণ করেন মমতা। বলেন, ‘লোকসভা নির্বাচনে কোচবিহারে আমরা হেরেছি। কিন্তু যারা জিতেছে তারা এখন গুন্ডামি করছে।


তৃণমূলনেত্রীর অভিযোগ, ভোটে জিতেই শান্ত কোচবিহারকে অশান্ত করছে। আমরা যাকে তাড়িয়ে দিয়েছিলাম, তাকেই বিজেপি নিল! আমরা ভোট করার জন্য বাঙালি-রাজবংশী ভাগ করি না।’


মমতা জানিয়ে দেন, ক্ষমতায় ফিরলে আবার বিনামূল্যে রেশন দেবে সরকার। বলেন, ‘সরকারি সুবিধা নিতে চাইলে দুয়ারে সরকার ক্যাম্পে যান। কেউ কোনও পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হবেন না।


তিনি মনে করিয়ে দেন, এখনও পর্যন্ত এক কোটি ১০ লক্ষ সাইকেল দিয়েছে কেন্দ্র। বলেন, পরিযায়ী শ্রমিকদের ট্রেনের ভাড়াও দেয়নি কেন্দ্র। পরিযায়ীদের ফেরাতে বাস-ট্রেনের ব্যবস্থা করেছি। সিপিএম-বিজেপি তখন কোথায় ছিলে?


দলত্যাগীদের উদ্দেশ্যে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেন মমতা। বলেন, ‘পোশাক বদলানো যায়, কিন্তু আদর্শ বদলানো যায় না।’ বলেন, ‘যারা প্রথম থেকে তৃণমূলে আছে তারা শেষদিন পর্যন্ত থাকে। দু’একজন চলে যায়। পোশাক বদলানো যায়, কিন্তু আদর্শ বদলানো যায় না।’