রায়গঞ্জ: ভোটের রায়গঞ্জ যেন রণক্ষেত্র। কোমরে অস্ত্র গুজে দুষ্কৃতী দাপাদাপি। কোথাও আবার কংগ্রেস প্রার্থীকে বন্দুক দেখিয়ে বুথ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ।
সকাল থেকেই রায়গঞ্জে পারদ তুঙ্গে। ভোট শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে করোনেশন স্কুলে, বুথের ভিতর ঢুকে ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ ওঠে। একে অপরের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে, হাতাহাতি শুরু করে দেন জোট ও তৃণমূল সমর্থকরা। উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে বুথের বাইরে। রাস্তায় তখন কোমরে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে দাপাদাপি।
১০ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থীকে আবার বন্দুক দেখিয়ে বুথ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ দিন, রায়গঞ্জের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে, কলেজ পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বুথের বাইরেও ব্যাপক বোমাবাজি হয়। আতঙ্কিত হয়ে পড়েন স্থানীয় ভোটাররা। সব ক্ষেত্রেই অভিযোগের আঙুল উঠেছে তৃণমূলের দিকে।
একদিকে দুষ্কৃতী যখন আগ্নেয়াস্ত্র-গুলি-বোমা নিয়ে দাপাদাপিতে ব্যস্ত, সেই সময় অবাধে চলল ছাপ্পাভোট। এ দিন সকাল থেকেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রায়গঞ্জ পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড।



এই ওয়ার্ডের, ২২ নম্বর বুথ, দ্বারকানাথ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বাইরে ব্যাপক বোমাবাজি হয়। অভিযোগ উঠেছে, বুথ জ্যাম করে ছাপ্পা ভোটেরও। রুখে দাঁড়ান স্থানীয় বাসিন্দারা। ছাপ্পা ভোট দেওয়ার অভিযোগে ইভিএম ভাঙচুর করে উত্তেজিত জনতা।
এই ৭ নম্বর ওয়ার্ডেই এ দিন সকালে তাণ্ডব চালায় বাইক বাহিনী। দশটা নাগাদ, ৭৯ এবং ৮০ নম্বর বুথের বাইরে চলে এলোপাথাড়ি গুলি। স্থানীয় সূত্রে খবর, পরের পর গুলির আওয়াজ শুনে, আতঙ্কে ৭৯ নম্বর বুথের বাইরে বেরিয়ে আসেন পোলিং এজেন্ট এবং ভোটকর্মীরা। তখনই সেখানে শুরু হয়ে যায় ছাপ্পা ভোট।

কংগ্রেসের অভিযোগ তাদের হাতে থাকা রায়গঞ্জ দখল করতে অবাধে ছাপ্পা ভোট দিয়েছে তৃণমূল। তৃণমূল অবশ্য অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। দলের উত্তর দিনাজপুর জেলা সভাপতি অমল আচার্য বলেন, সমস্ত অভিযোগ ভিত্তিহীন। চারটে ওয়ার্ডে বিক্ষিপ্ত ঘটনা, সেটাও না ঘটলে ভাল। ২-৪ আসন পেলে কিছু আসে যায় না। জিততে পারবে না বুঝে এ সব করছে বিরোধীরা।

রায়গঞ্জে এবার ত্রিমুখী লড়াই। রায়গঞ্জ পুরসভা কংগ্রেসের হাতে ছিল! রায়গঞ্জ বিধানসভা কংগ্রেসের। রায়গঞ্জ লোকসভা সিপিএমের! গত পনেরো বছর ধরে এই পুরসভা কংগ্রেসের দখলে। এবার সেখানেই ঘাসফুল ফোটাতে মরিয়া তৃণমূল। তাদের প্রতিপক্ষ, একদিকে, বাম-কংগ্রেস জোট, আরেকদিকে বিজেপি। শেষমেশ কী হয় তা জানা যাবে বুধবার। কিন্তু, তার আগে এ দিনের ভোট ঘিরে, উত্তেজনার পারদ একেবারে চরমে উঠল রায়গঞ্জে।
আর এহেন রায়গঞ্জেই এবার অস্ত্র উঁচিয়ে, বোমা মেরে চলল ভোট উৎসব!