কোলাঘাট (পূর্ব মেদিনীপুর): ফের সন্দেহের শিকার তরতাজা প্রাণ! ডায়মন্ডহারবার, হরিদেবপুরের পর এবার পূর্ব মেদিনীপুর।
ঘটনায় প্রকাশ, মঙ্গলবার রাতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়ে যান কোলাঘাটের ছাতিন্দার বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম। বুধবার সকালে পাশের গ্রামে সাহাপুরে উদ্ধার হয় বছর বাইশের ওই মানসিক ভারসাম্যহীন যুবকের দেহ। ময়নাতদন্তে জানা যায়, সিরাজুলের দেহে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, সাহাপুর গ্রামে গত কয়েকদিন মোবাইল ফোন চুরি যাচ্ছিল। চোর সন্দেহে গণপিটুনি দেওয়াতেই সিরাজুলের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে অনুমান। ঘটনায় ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
সিরাজুলের এই পরিণতি মনে করিয়ে দিয়েছে উলুবেড়িয়ার মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক কোরপান শাহর কথা। ২০১৪ সালের ১৬ এপ্রিল নীলরতন সরকার হাসপাতালের বয়েজ হস্টেলে থেকে চুরি যাচ্ছিল মোবাইল ফোন। ভোরে হস্টেলের বারান্দার মানসিক ভারসাম্যহীন কোরপান শাকে ঘুরে বেড়াতে দেখে সন্দেহ হয় ছাত্রদের। পিলারের সঙ্গে বেঁধে টানা দু’ঘণ্টা বাঁশ এবং কাঠের পায়া দিয়ে কোরপানকে বেধড়ক মারধর করেন হবু ডাক্তার সহ ১১ জন। মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে কোরপান শাহ। যে ঘটনায় সব ধৃতই এখন জামিনে মুক্ত।
সম্প্রতি গত মে মাসে এমনই এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ডহারবারে। অভিযোগ, তৃণমূল পরিচালিত ডায়মন্ডহারবারের হরিণডাঙা পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তাপস মল্লিকের সামনে, তাঁর সাগরেদরা মোষ চুরির গুজবে, নৃশংসভাবে পিটিয়ে খুন করে কলেজ ছাত্র কৌশিক পুরকায়স্থকে। সিবিআই তদন্ত দাবি করে হাইকোর্টে মামলার করেছে নিহত ছাত্রর পরিবার। রাজ্য সরকারকে হলফনামা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট।
একই মাসে বর্ধমানের জামালপুরে চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে মৃত্যু হয় একজনের। জখম তিন জন। পুলিশ সূত্রে খবর, গভীর রাতে চাঁপাডাঙা থেকে একটি বাইকে করে চার ব্যক্তিকে যেতে দেখে সন্দেহ হয় গ্রামবাসীদের। সন্দেহ থেকেই শুরু হয় গণপিটুনি।
এর আগে গত বছর ডিসেম্বরে মুরগি চোর সন্দেহে সালিশি সভায় ডেকে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ ওঠে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলিতে। ২০ জনের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকত খুনের মামলা রুজু করে পুলিশ।
গত বছর এপ্রিল মাসে গরুচোর সন্দেহে গণপিটুনিতে দু’জনের মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে কাটোয়ায়। প্রতিবাদে, কাটোয়া হাসপাতালে ভাঙচুর মৃতদের প্রতিবেশীদের। ঘটনায় ৭ জনকে আটক করে পুলিশ। তাদের মুক্তির দাবিতে পরের দিন সকালে কাটোয়া থানায় তাণ্ডব চালায় মৃতদের প্রতিবেশীরা।
এইসব ঘটনার স্মৃতিই ফের উস্কে দিল হরিদেবপুর ও কোলাঘাটের ঘটনা।