কলকাতা: শিয়রে করোনার বিপদ! তারই মাঝে ঘর ছাড়তে হচ্ছে বহু পরিযায়ী শ্রমিককে। অভিযোগ, গ্রামে কাজ নেই। সরকারি প্রকল্পের সুবিধা মিলছে না। রোজগার বন্ধ। তাই ফিরতে হচ্ছে ভিনরাজ্যে। এই নিয়ে চলছে রাজনৈতিক চাপানউতোর।


শুধু দুটি অন্ন খুঁটি কোনও মতে কষ্টক্লিষ্ট। প্রাণ রেখে দেয় বাঁচাইয়া… নাহি জানে কার দ্বারে দাঁড়াইবে বিচারের আশে, দরিদ্রের ভগবানে বারেক ডাকিয়া দীর্ঘশ্বাসে মরে সে নীরবে। এদের অনেকেই লকডাউনের মধ্যে নীরবে পৃথিবী থেকে হারিয়ে গিয়েছে!

যাঁরা জীবনযুদ্ধে এখনও টিকে আছেন, তাঁরা ফের একবার পেটের দায়ে পাড়ি দিচ্ছেন, সেই জায়গায় যেখান থেকে নিজের আশ্রয়ে ফিরে এসেছিলেন। যেমন মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলার ৪০ জন পরিযায়ী শ্রমিকের গন্তব্য সুদূর চেন্নাই। বুধবার হাওড়া স্টেশন চত্বরেও দেখা গিয়েছে পরিযায়ী শ্রমিকদের ভিড়। কেউ ফিরবেন মুম্বই, কেউ বা দিল্লি, কেউ গুজরাত।

সাজিরা বেওয়া নামের এক পরিযায়ী শ্রমিক বলছেন, ‘এখানে কাজ নেই, পারিশ্রমিক নেই, জেলার হাসপাতালে দিয়েছিল, কাজ করতে পারিনি, ম্যাডাম ডেকেছে চলে যাচ্ছি।’ উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের বাহির পঞ্চায়েতের লহুজ গ্রামের বাসিন্দারা ‘দাদাভাই কমিটি’ নামে একটি মঞ্চ গড়েছেন। পরিযায়ীদের বাসে করে ভিনরাজ্যে পাঠানোর ব্যবস্থা তাঁরাই করছেন। ভাড়া বাঁধা। মুম্বই যেতে বাসে আসন পিছু ভাড়া সাড়ে ৪ হাজার টাকা। দিল্লি যেতে লাগছে ২৭০০ টাকা। সপ্তাহে তিনটে করে বাস যাচ্ছে।

করোনার সঙ্কট চরমে। কিন্তু, বাড়িতে থেকে তো পেটের ভাত জুটছে না! তাই সবাই ফের ভিনদেশী হওয়ার পথে! মুর্শিদাবাদের পরিযায়ী শ্রমিক সাহাবুদ্দিন শেখ বলেছেন, ‘এখানে কাজ নেই, তাই পুরনো জায়গায় ফিরে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই, জমানো টাকা সবটাই শেষ।’

নির্মাণ শ্রমিক শ্যামচাঁদ মণ্ডলের গোটা পরিবার চলে তাঁরই উপার্জনে। তাঁর অভিযোগ, সরকারি প্রকল্প ঘোষণা হলেও কাজ পাননি! একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পরিসংখ্যান বলছে, লকডাউনের সময় ২৩ শতাংশ পরিযায়ী শ্রমিক হেঁটে বাড়ি ফিরেছেন। ৮০ শতাংশ বলেছেন তাঁরা ১০০ দিনের প্রকল্পে কাজ পাননি। যাঁদের মধ্যে সমীক্ষা হয়েছে, তাঁদের প্রায় ৭৮ শতাংশ বলেছেন, লকডাউনে তাঁদের কাজ হয় পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে, নয় তো অনেকাংশে কমে গেছে।

আর পরিযায়ীদের এই দুর্দশা নিয়ে আগের মতোই চলছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। পরিযায়ীদের মৃত্যু নিয়ে কেন্দ্রের কাছে কোনও তথ্য নেই, সংসদে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রক। প্রতিবাদে সবর বিরেধীরা। গোটা বিশ্ব দেখেছিল তাঁরা মারা যাচ্ছেন, শুধু মোদি সরকারের কাছে খবর নেই। কটাক্ষ রাহুল গাঁধীর। পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ যোজনায় নিশ্চিত কর্মসংস্থানে কেন বাংলার নাম পাঠানো হল না - এই প্রশ্ন তুলে বুধবার রাজ্য জুড়ে পথে নামে কংগ্রেস। রাজনীতির এই বাগযুদ্ধের মধ্যেই কাজের খোঁজে মানুষগুলো ফের ভিনরাজ্য মুখী।