সুদীপ চক্রবর্তী, উত্তর দিনাজপুর: প্রাক বর্ষার মধ্যেই রায়গঞ্জের কুলিক পক্ষীনিবাসে আসতে শুরু করেছে পরিযায়ী পাখির দল। কার্যত লকডাউনের জেরে কমেছে দূষণ। যার জেরে এবছর রেকর্ড পরিমাণ পরিযায়ী পাখি আসবে বলে আশা বন দফতরের।


আগামী সপ্তাহেই বঙ্গে ঢুকবে মৌসুমি বায়ু। ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে প্রাক বর্ষার বৃষ্টি।  আর বৃষ্টি শুরু হতে না হতেই আসতে শুরু করেছে পরিযায়ী পাখির দল। 


উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের কুলিক পক্ষীনিবাস। প্রতি বছর জুন-জুলাইতে এখানে কুলিক নদীর ধারে ভিড় জমায় পরিযায়ী পাখিরা। এবার সেই সংখ্যা সর্বকালীন রেকর্ড ছাপিয়ে যাবে বলে আশা বন দফতরের। 


বন আধিকারিকদের দাবি,  দূষণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় গত কয়েক বছরে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা কমে গিয়েছিল। কিন্তু গত বছর লকডাউনের জেরে দূষণ কমায় বদলে যায় পরিস্থিতি। 


গত বছর পক্ষীনিবাসে আসে ৯৮ হাজার ৬৩১টি পরিযায়ী পাখি। যা সর্বকালীন রেকর্ড। এবছরও কার্যত লকডাউন থাকায় দূষণ সেভাবে বাড়েনি। ফলে আরও বেশি পরিযায়ী পাখি আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। 


রায়গঞ্জ অতিরিক্ত বিভাগীয় বনাধিকারিক জানিয়েছেন, কুলিক পক্ষীনিবাসে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা এক লক্ষ ছাড়িয়ে যাবে। সরকার থেকে পরিযায়ী পাখিদের এই কুলিক পক্ষীনিবাসে থাকার উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরি করার ফলেই দিন দিন পাখির সংখ্যা বাড়ছে। 


তবে গতবছর থেকে অতিমারীর জন্য পর্যটকদের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে কুলিক পক্ষীনিবাস।  ফলে পর্যটক না আসার ফলে রায়গঞ্জ বন বিভাগের আয় কমে গিয়েছে বলে জানালেন অতিরিক্ত বিভাগীয় বন আধিকারিক সিতাংশু গুপ্ত।


এশিয়ার বৃহত্তম পক্ষীনিবাস বলে পরিচিত উত্তর দিনাজপুর জেলা সদর রায়গঞ্জ শহর সংলগ্ন কুলিক পক্ষীনিবাস। রায়গঞ্জ শহরের কুলিক নদীর ধারে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে ৬০০ একর বনাঞ্চল এলাকা নিয়ে গঠিত এই পক্ষীনিবাসে প্রতি বছর মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে জুন মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত হাজার হাজার মাইল দূরের শীতপ্রধান দেশ থেকে ছুটে আসে পরিযায়ী পাখিরা। 


ওপেন বিল স্টর্ক, ইগ্রেট, কর্মোনেন্ট, নাইট হেরন মূলত এই চার প্রজাতির পরিযায়ী পাখিরা এই কুলিক পক্ষীনিবাসে এসে সঙ্গী নির্বাচন করে বাসা বাঁধে। প্রজননের মাধ্যমে ডিম ফুটিয়ে শাবকের জন্ম দেয়। শাবকদের উড়তে শেখানো তাদের বড় করে তোলা পর্যন্ত শীত আসার আগেই এরা আবার ফিরে যায় যেখান থেকে তারা আসে। 


পরিযায়ী পাখিদের কলতানে মুখরিত হয়ে থাকে কুলিক পক্ষীনিবাস। তাদের কলাকৌশল ও কলতানে আকৃষ্ট হয়ে বহু পর্যটকের সমাগম হয় রায়গঞ্জের কুলিক পক্ষীনিবাসে। লকডাউনের কারণে পরিবেশ দূষন কম হওয়ায় পরিযায়ী পাখির সংখ্যা যে বৃদ্ধি পাবে সেই আশাতেই বুক বাধছেন পরিবেশ প্রেমীরাও।


প্রতি বছর শীতপ্রধান দেশ থেকে এখানে বেশ কয়েকটি প্রজাতির পরিযায়ী পাখি আসে। প্রজননের পর ফের তারা আবার ফিরে যায় শীতের দেশে। 


পরিযায়ী পাখিদের দেখতে প্রতি বছর ভিড় জমান বহু পর্যটক। অতিমারীর জন্য পাখিরা বেশি সংখ্যায় এলেও পক্ষীনিবাস বন্ধ থাকায় আয় কমছে বলে জানিয়েছে বন দফতর।