মুর্শিদাবাদ: বাড়ি ফিরল মুর্শিদাবাদের চার পরিযায়ী শ্রমিকের কফিন বন্দি নিথর দেহ। বুধবার ভোররাতে কফিন বন্দী দেহ ফিরল মুর্শিদাবাদের ভরতপুর থানার গড্ডা গ্রামে ও খড়গ্রাম থানার আতাই গ্রামে । কিছুটা  আর্থিক সচ্ছ্বলতার টানে রাজ্যের বাইরে পাড়ি জমিয়েছিলেন তাঁরা।  কফিন বন্দি হয়ে তাঁদের এই ‘ফেরা’ যন্ত্রণার ও পরিবারকে নিঃসঙ্গ করে দেওয়ার। মৃতদের দেহ ফিরতেই কান্নায় ভেঙে পড়ল গোটা গ্রাম। শেষ বারের মতো দেখার জন্য ভিড় করেছিলেন গোটা গ্রামের বাসিন্দারা।


 পরিবারের অভাব মেটাতে লকডাউনের পরেই ভিনরাজ্যে পাড়ি দিয়েছিল তারা। পরিবার, সন্তান ছেড়ে কাজের জন্য ভিন রাজ্যে পাড়ি দেন তাঁরা। গত শনিবার পরিযায়ী শ্রমিকের কাজে মুম্বাইয়ের ওরোয়ালি হনুমান গলি এলাকায় বহুতলের ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয় মুর্শিদাবাদ জেলার ভরতপুর থানার গড্ডা গ্রামের তিন শ্রমিকের। ওই একই ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে খড়গ্রাম থানার আতাই গ্রামের চিন্ময় মণ্ডল নামের আরও এক শ্রমিকের। শনিবার সন্ধেয় পরিবারের লোকজন এই মর্মান্তিক খবর জানতে পেরেছিলেন।


 শনিবার বিকাল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ রাজমিস্ত্রীর সহযোগী হিসেবে কাজ করার সময় দুর্ঘটনা ঘটে।   মাস ছয়েক আগে মুম্বইয়ে কাজে গিয়েছিলেন গড্ডা গ্রামের বছর পঁয়ত্রিশের ভরত মন্ডল, বছর ত্রিশের আভিনাথ দাস ও লক্ষণ মন্ডল (৩৫)। দুর্ঘটনায় তিন জনেরই মৃত্যু হয়। তাঁদের কেউ বাড়ি করতে গিয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন। ঋণ মেটাতে অর্থ রোজগারের  জন্য রাজ্যের বাইরে পাড়ি দিয়েছিলেন।  কেউ বা গিয়েছিলেন মেয়ের বিয়ে বা ছেলের পড়াশোনার খরচ যোগাড় করতে। পরিবারের স্বচ্ছলতার জন্য কাজে গিয়েও শেষ রক্ষা হল না।


ভরতের বাবা অনিল মণ্ডল কাঁদতে কাঁদতে  বলেছিলেন, ২০২০-তে লকডাউনের সময় পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরমুখী হওয়ার ঘটনার সময় নিহতরাও বাড়ি ফিরেছিলেন। গত নভেম্বর পর্যন্ত বাড়িতে ছিলেন। কোনও কাজ না পেয়ে ফের মুম্বই রওনা দিয়েছিলেন তাঁরা। কয়েক মাস পর দুর্গাপুজোর সময় তাঁদের বাড়ি ফেরার কথা ছিল। 
কিন্তু পুজোর অনেক আগেই ফিরলেন তাঁরা, তবে কফিনবন্দি হয়ে।