মোহন প্রসাদ, কার্শিয়ং: করোনা ভাইরাসের টিকাকরণ ঘিরে ভারত-নেপাল মৈত্রী ও সৌহার্দ্যের ছবি উজ্জ্বল হল দার্জিলিঙে। ‘ক্যুইন অফ হিলস’-এ কুলি, শ্রমিক ও পরিচারিকার কাজ করেন নেপালের অনেক বাসিন্দা। কোনও সরকারি নথি না থাকা সত্ত্বেও সরকারি উদ্যোগে করোনার টিকা পেলেন তাঁরা। ভ্যাকসিন পেয়ে এ দেশের সরকার ও প্রশাসনকে তাঁরা ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
করোনাকালে ভ্যাকসিন পাঠিয়ে নেপালকে আগেই সাহায্য করেছে ভারত। এবার কর্মসূত্রে এদেশে বসবাসকারী শ্রমজীবী নেপালি নাগরিকদের করোনার টিকাকরণও শুরু হল। দার্জিলিং জেলায় জোরদার চলছে অভিযান। দার্জিলিং, মিরিকের পর এবার কার্শিয়ঙেও সরকারি নথি ও পরিচয়পত্রহীন নেপালি নাগরিকদের করোনার প্রতিষেধক দেওয়া শুরু হল।
১৯৫০ সালের ভারত-নেপাল শান্তি ও বন্ধুত্ব চুক্তি অনুযায়ী, দুদেশের জনগণ ও পণ্য অবাধে সীমান্তের এপারে এবং ওপারে যেতে পারে। সেইমতো নেপালের বহু নাগরিক কর্মসূত্রে দার্জিলিঙে থাকেন। কেউ শ্রমিক, কেউ, কুলি অথবা পরিচারিকার কাজ করেন। অর্থাৎ প্রত্যেকেই সুপার স্প্রেডার ক্যাটিগরির আওতাভুক্ত। কিন্তু ভারতের নাগরিক না হওয়ায় তাঁদের কাছে আধার, ভোটারকার্ড বা রেশন কার্ডের মতো সরকারি পরিচয়পত্র নেই। তা সত্ত্বেও সোমবার বিশেষ শিবিরের আয়োজন করে কার্শিয়ংয়ে করোনার ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ দেওয়া হল তাঁদের। দার্জিলিং জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, নেপালি নাগরিকদের নামের তালিকা তৈরি করে একাধিক জায়গায় আরও ভ্যাকসিনেশন শিবিরের আয়োজন করা হবে।
ভ্যাকসিন পেয়ে নেপালের নাগরিকরা খুশি। কার্শিয়ঙে কর্মরত নেপালের নাগরিক লোকবাহাদুর বসনীত জানিয়েছেন, ‘আমার কাছে আধারকার্ড নেই, রেশন কার্ডও নেই। আমি নেপাল থেকে এসেছি। এখানে কুলির কাজ করছি। আজ টিকা পেলাম।’
কৃষ্ণ বসনীত নামে নেপালের অপর এক নাগরিক জানিয়েছেন, ‘আমি নেপালের নাগরিক। কাজের সূত্রে এখানে থাকি। ভ্যাকসিন না নিলে নিজের দেশেও ফিরতে পারব না। এখানে ভ্যাকসিন নেওয়ার সুযোগ পেয়েছি, অবশ্যই নেব।’
কার্শিয়ং মহকুমা হাসপাতালের সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার অফিসার বিজয় সিনচুরি জানিয়েছেন, ‘যাঁদের কাছে কাগজপত্র নেই তাঁদের টিকাকরণ হচ্ছে। ৮০-রও বেশি শ্রমিকের টিকাকরণ হয়েছে। আরও ১৫০ জনের নামের তালিকা আছে। সংখ্যাটা বাড়তে পারে।’
নেপালের নাগরিকদের টিকাকরণ শুরু হওয়ায় কার্শিয়ঙের হোটেল মালিকরাও স্বস্তিতে। রাজু প্রসাদ আগরওয়াল নামে এক হোটেল মালিক বলেছেন, ‘আমাদের জেলা প্রশাসন কথা রেখেছে। যে শ্রমিকরা বাইরে থেকে আসছে, যাদের কোনও ভারতীয় কাগজপত্র নেই, তাদের টিকাকরণ হচ্ছে। এটা খুব ভাল হল। ১৯৫০ সালের চুক্তি অনুযায়ী, যে কোনও জায়গায় গিয়ে দুদেশের নাগরকিরা কাজ করতে পারেন। ওদের কোনও ভারতীয় নথি নেই। চিন্তা ছিল ওরা হয়তো টিকা পাবে না। করোনা সংক্রমণ নিয়েও উদ্বেগ ছিল। কারণ, ওরাই হোটেলে পর্যকদের মালপত্র নিয়ে আসে। টিকাকরণ শুরু হওয়ায় আর সেই চিন্তা নেই।’