পার্থপ্রতিম ঘোষ, কলকাতা: কীভাবে কলকাতায় যোগাযোগ তৈরি হল পুলিশের সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে নিহত হওয়া দুই গ্যাংস্টারের? কী করে তারা নিউটাউনের ফ্ল্যাট ভাড়া পেল? কার সাহায্যে এই শহরে গা ঢাকা দিল তারা? কয়েকদিন আগে ঘটে যাওয়া চাঞ্চল্যকর ঘটনার পর থেকেই এই প্রশ্নগুলি উঠতে শুরু করেছে। 


কলকাতা পুলিশের এসটিএফ সূত্রে খবর, ভরত কুমার নামে লুধিয়ানায় ধৃত ব্যবসায়ীর মাধ্যমেই পঞ্জাব থেকে কলকাতায় এসেছিল গ্যাংস্টার জয়পাল ভুল্লার ও যশপ্রীত সিং খাড়ার। সুমিত কুমার নামে এক ব্যক্তির নথি ব্যবহার করে, গ্যাংস্টারদের জন্য ফ্ল্যাট ভাড়া নেয় ভরত। চারু মার্কেট এলাকায় দুই গ্যাংস্টারের সঙ্গী ভরতের শ্বশুরবাড়ি। কলকাতার সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের যোগাযোগ। ২০১৮ সালে তার বিয়ে হয় কলকাতার চারু মার্কেট এলাকার বাসিন্দা এক তরুণীর সঙ্গে। 


ভরতের শাশুড়ি ভারতী দেব অবশ্য জামাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ থাকার কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি ভরত সম্পর্কে প্রশ্নের জবাবে বলছেন, ‘বিয়ে কবে হয়েছে জানি না। ওরা এখান থেকে চলে গেছে। মেয়েকে বলতাম, কোথায় আছিস? ও বলত, এখানে আছি, ওখানে আছি। মেয়ে ২০১৮ সালে চলে যায়। বলল, একজনের সঙ্গে থাকব, পঞ্জাবে থাকব। শেষবার মে মাসে আসে, দেখা করে চলে যায়। দু’এক ঘণ্টা ছিল। বলল, ও হোটেলে আছে, কাজে আছে। শেষবার ২৭ মে মেয়ের সঙ্গে কথা হয়। বলল, পঞ্জাবে আছি।’


এসটিএফ সূত্রে খবর, ২৩ মে থেকে নিউটাউনের সাপুরজি আবাসনে ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকছিল দুই গ্যাংস্টার। তার আগে ২০ মে কালো হন্ডা অ্যাকর্ড গাড়িতে দুই গ্যাংস্টারকে নিয়ে কলকাতায় আসে ভরত। ওই দিনই বিমানে কলকাতায় আসে ভরতের স্ত্রী। তারা সল্টলেকের একটি হোটেলে ওঠে।


এ বিষয়ে ভরতের স্ত্রী জানিয়েছেন, ভরত বলেছিল, ‘কলকাতায় এসো, তাই এসেছিলাম। কলকাতায় হোটেলে ছিলাম। আমরা দু’জনেই ছিলাম। ওর তো এখানে কাজ ছিল। ভিআইপি নম্বরের কাজ করে ও। কলকাতায় অনেকবার এসেছি।’


পঞ্জাব পুলিশের দাবি, ভরতের ভিআইপি মোবাইল নম্বর বিক্রির ব্যবসা ছিল। ক্রমে একাধিক প্রতারণার সঙ্গেও জড়িয়ে পড়ে সে। এরপরেই গ্যাংস্টারদের সঙ্গে যোগাযোগ হয় তার। অপরাধীদের মূলত লজিস্টিক সাপোর্ট দিত সে। কিন্তু সে কথা মানতে নারাজ ভরতের স্ত্রী। তাঁর দাবি, ভরতকে ফাঁসানো হয়েছে। পুলিশ মিথ্যে কথা বলছে। ও বাড়ি বিক্রি করত, সব্জি-দুধ বিক্রি করত। গ্যাংস্টারদের সঙ্গে কী করে যোগাযোগ হবে? কোনও বন্ধু ফোন করে বলে আসতে। 


সূত্রের খবর, ফরেন্সিকের প্রাথমিক রিপোর্টে নিউটাউনের ফ্ল্যাট থেকে তৃতীয়জনের আঙুলের ছাপ মিলেছে। সেই ফিঙ্গারপ্রিন্ট ভরত কুমারের কিনা, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। এদিকে, যার নথি ব্যবহার করে নিউটাউনে ফ্ল্যাট ভাড়া নেওয়া হয়েছিল, সেই সুমিত কুমারকে মোহালি থেকে গ্রেফতার করেছে পঞ্জাব পুলিশ। তার এক পুলিশ বন্ধুর নাম তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন। সূত্রের খবর, ওই পুলিশকর্মীর আইডি কার্ড কোনওভাবে জোগাড় করে ভরতকে দেয় সুমিত। এর ফলে, টোলপ্লাজায় সুবিধে হয় ভরতের।