আশাবুল হোসেন, বিজেন্দ্র সিংহ ও ঋত্বিক মণ্ডল, কলকাতা: বিজেপির লক্ষ্য বঙ্গ দখল। বাংলা দখলে তাদের বড় ভরসা অবাঙালিও ভোটও। আবার ক্ষমতা ধরে রাখতে তৃণমূলের এখন হাতিয়ার বাঙালি আবেগ। ‘ঘরের লোক-বাইরের লোক’ তরজা তুঙ্গে। আর এই প্রেক্ষাপটে বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের মন্তব্যে সমালোচনার ঝড়।


আজ দিলীপ বলেন, ‘বহুবছর ধরে বিহার ও বাইরে থেকে বহু লোকজন আসেন। বাঙালিদের থেকে শহরের ইতিহাসে এঁদের ভূমিকা বেশি।’

তৃণমূল কংগ্রেস ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করে বিজেপি রাজ্য সভাপতি বলেন, ‘যারা ট্যাক্সি চালায়, ট্রাম-বাস চালায় তারা বিহারী। বাঙালিদের থেকে শহরের ইতিহাসে এদের ভূমিকা বেশি। এরা বহিরাগত? শাহরুখ খানকে নিয়ে এলেন, তিনি বহিরাগত নন? রবীন্দ্রনাথ কি শুধু বাংলার জন্য লিখেছেন? না ভারতের জন্য? আপনি তো এখানে গাঁধীজির জয় বলেন, কিন্তু গাঁধীজি গুজরাত থেকে এসেছেন। প্রধানমন্ত্রীও গুজরাত থেকে। তিনি কি বহিরাগত? আইপিএস-আইএসরা সাধারণত বিহার-ইউপি থেকে আসেন। তাঁদের নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আর প্রধানমন্ত্রী-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বহিরাগত? যে আইপিএসের জন্য ধরনা দিয়েছেন তিনি বহিরাগত নন?’

বিজেপি রাজ্য সভাপতির এই মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন বিরোধীরা। বারাসতের তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার বলেছেন, ‘ধর্মে-ধর্মে ভাষায়-ভাষায় ভাগাভাগি করতে চাইছেন। উনি মুর্খ। গরুর দুধে সোনা পেলেই বাংলায় রাজনীতি করা যায় না।’

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেছেন, ‘এটা বাঙালিকে অপমান করা। বাংলার কালচার জানে না।’

বিজেপি অবশ্য দিলীপের কথায় কোনও ভুল দেখছে না। দিলীপের পাশে দাঁড়িয়েছেন বিজেপি সর্বভারতীয় সহ সভাপতি মুকুল রায়।

ভেদাভেদের রাজনীতি নিয়ে দু’পক্ষকেই দুষছে বাম-কংগ্রেস। সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, ‘আমরা ভেদাভেদের রাজনীতি করি না। সবাইকে নিয়ে চলাই আমাদের সংস্কৃতি। এই রাস্তায় বিজেপি-তৃণমূল হাঁটে।’

অধীর বলেছেন, ‘রবীন্দ্রনাথ বিশ্বের জন্য কাজ করেছিলেন। বাঙালি কখনও নিজের কথা ভাবেনি, দেশের জন্য ভেবেছে। একটা সময় বলা হত, যেটা বাংলা আজ ভাবে সেটা কাল সারা দেশ ভাবে। শাহরুখ নিয়ে বিজেপির সংকীর্ণতা প্রকাশ পাচ্ছে। জাত-ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে। আমরা সবাই ভারতীয়।’

সেই কবেকার কথা। গাঁধীজির রাজনৈতিক গুরু হিসাবে পরিচিত, মহারাষ্ট্রের মাটিতে জন্মানো গোপালকৃষ্ণ গোখলে বলেছিলেন, ‘What Bengal thinks today, India thiks tomorrow.’ অর্থাৎ‍, ‘বাংলা আজ যা ভাবে, ভারত তা ভাবে কাল।’ তারপর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে। বাংলা পাল্টেছে। বাংলার রাজনীতিও পাল্টেছে।

ঐতিহাসিক যদুনাথ সরকার তাঁর ‘বাংলার ইতিহাস' গ্রন্থে উনিশ শতকের বাংলাকে নবজাগরণের পীঠস্থান’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘কনস্টান্টিনোপলের পতনের পর ইউরোপে যে নবজাগরণ দেখা যায়, উনবিংশ শতকে বাংলার নবজাগরণ ছিল তার থেকেও ব্যাপক, গভীর এবং বৈপ্লবিক।’

তবে সেসব এখন অতীত। রামমোহনও অতীত, বিদ্যাসাগরও অতীত। বাংলা এখন রাজনীতি সর্বস্ব।