সমীরণ পাল, বারাসাত : পোস্তা-মাঝেরহাট ব্রিজের ভেঙে পড়ার সেই ভয়াবহ ঘটনাগুলো আজও ফিকে হয়নি স্মৃতি থেকে। এরই মাঝে উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সদর বারাসাত চাঁপাডালি মোড় থেকে কলোনী মোড় পর্যন্ত পূর্ত দফতরের রেল সেতুটির অবস্থাও বিপজ্জনক। সেতুটির অবস্থা এতটাই ভয়াবহ যে যে কোনও সময় তা ভেঙে পড়তে পারে। বহু মানুষের জীবনহানি ঘটাতে পারে বলেও আশঙ্কা। সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে রাজ্য সরকারের পূর্ত দফতরের ইঞ্জিনিয়াররা জানিয়েছেন যে, সেতুর বহু জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি সেতুর গার্ডারগুলিও সরে গিয়েছে বিপজ্জনকভাবে। তার সঙ্গে সেতুর পিলারগুলিরও বহন ক্ষমতা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ইঞ্জিনিয়াররা। ফলে সেতুটি যে কোনও সময় ভেঙে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তাঁরা। জানা যাচ্ছে, বারাসাতের এই সেতুর বিপজ্জনক অবস্থার কথা খবর জানতে পেরে সম্প্রতি নবান্ন থেকে জেলা শাসকের দফতরে সেতুর সংস্কারের নির্দেশিকাও দেওয়া হয়েছে।


জেলা পরিষদ সূত্রে জানা যাচ্ছে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যাতে সেতু সংস্কাররের কাজ শুরু করা যায়, তা নিয়ে বেশ কয়েকধাপ বৈঠক হয়েছে। দ্রুত সেতু সংস্কারের জন্য জেলা স্তরে প্রশাসনিক বৈঠকে রাজ্য সরকার ৬ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছে। চলতি অগাস্ট মাস থেকেই ধাপে ধাপে কাজ শুরু হবে এবং সংস্কারের কাজ শেষ হতে হতে প্রায় দেড় বছর সময় লাগবে বলে মনে করা হচ্ছে। সেতু সংস্কারের কাজ শুরুর আগে যেখানে কাজ হবে, তার নিচে বসা হকারদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে । তবে, কাজ চলাকালীন সেতুর যান চলাচল বন্ধ করা হবে না বলেও খবর পাওয়া যাচ্ছে।


স্থানীয় সূত্রে খবর, বহুদিন ধরেই সেতুটি বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। স্থানীয় মানুষরাও অনেকদিন ধরে সেতু সারাইয়ের জন্য আবেদন জানাচ্ছিলেন। জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যেহেতু সেতুর সংস্কারের কাজ নিচের অংশে বেশি হবে, তাই কাজ চলাকালীন যান চলাচল বন্ধ করার কোনও প্রয়োজন নেই। পাশাপাশি যশোর রোড ও ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের সংযোগ স্থাপনকারী জেলা সদরের গুরুত্বপূর্ণ রেল সেতু পুরোপুরি বন্ধ করে দিলে যোগাযোগ ব্যবস্থায় সমস্যা দেবে বলেই মূলত এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।


তবে, সমস্যা দেখা দিয়েছে অন্য জায়গায়। একেই করোনা পরিস্থিতি আর লকডাউনে বিপর্যস্ত জনজীবন। তার উপর সামনেই দুর্গাপুজো আসছে। ফলে, রোজগার হারানোর আশঙ্কায় সেতুর নিচে থাকা কয়েকশো ব্যবসায়ী জায়গা থেকে সরতে চাইছেন না। এর ফলেই সেতু সংস্কারের কাজ ব্য়াহত হচ্ছে। তাঁদেরকে পুনর্বাসন দেওয়া নিয়েও আলোচনা চালানো হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে। অন্যদিকে আবার রাতে এবং ভোরের দিকে এই সেতুর উপর দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল করে। যে কোনও সময়ে বড় দুর্ঘটনা ঘটে গেলে প্রাণহানি হবে বহু মানুষের। তাই ব্যবসায়ীরাও আতঙ্কিত হয়ে রয়েছেন। তাঁরাও চাইছেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেতু সংস্কারের কাজ শুরু হোক।