কলকাতা ও হাওড়া: মেয়াদ ফুরোনো ওষুধের মারণ কারবারে চাঞ্চল্যকর তথ্য। তদন্তে উঠে এল দু’টি নামী ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থার নাম।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, মোটা টাকার বিনিময়ে ধৃতদের মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ সরবরাহ করত ওই দুই সংস্থা। এরপর ওই ওষুধের স্ট্রিপের ওপর তারিখ রিপ্রিন্ট করে বাজারে বিক্রি করত ধৃতরা। ওষুধের এই মারণ কারবারে বেশ কয়েকজন ডিস্ট্রিবিউটর জড়িত বলেও অনুমান।
লালবাজার সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার এ নিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন স্টেট ড্রাগ কন্ট্রোলার। সেখান থেকে জালিয়াতির পর্দাফাঁস! বড়বাজারের ক্যানিং স্ট্রিট থেকে হাওড়া-- কান টানতেই খোঁজ মেলে মাথার।
প্রথমে গ্রেফতার করা হয় বড়বাজারের ছাপাখানার মালিক পবন ঝুনঝুনওয়ালাকে, তারপর ধরা পড়েন হাওড়ার গোলাবাড়ির বাসিন্দা রিনেস সারোগি। গোলাবাড়ির বাসিন্দা হলেও বেলুড়ের এই আবাসনে একটি গুদাম কিনে রেখেছিলেন রিনেস। পুলিশ সূত্রে দাবি, এই গুদামেই রাখা হত মেয়াদ উত্তীর্ণ পেটি পেটি ওষুধ।
কিন্তু যেসব ওষুধের মেয়াদ ফুরিয়ে গিয়েছে, সেই সব ওষুধ বাজারে কীভাবে চালানো হত? পুলিশ সূত্রে দাবি, ২ নামী ওষুধ কোম্পানির কাছ থেকে মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ কিনতেন হোলসেলার রিনেস সারোগি। তারপর সেই সময় মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ পাঠিয়ে দেওয়া হত ক্যানিং স্ট্রিটের ছাপাখানায়।
সুকৌশলে ওষুধের স্ট্রিপ বা শিশি থেকে নেলপালিশ রিমুভার দিয়ে মুছে দেওয়া হত এক্সপায়ারি ডেট! ধরা যাক, একটা ওষুধের এক্সপায়ারি ডেট লেখা রয়েছে-- জানুয়ারি ২০১৭। কৌশলে সেটা করে দেওয়া হল ২০১৯!
এভাবেই নতুন মোড়কে বাজারে ছড়িয়ে দেওয়া হত মেয়াদউত্তীর্ণ ওষুধ! অজান্তে আমি আপনি সেই ওষুধ খেয়েও ফেলতাম! এর নেপথ্যেও ছিল বিপণনের কৌশল। পুলিশ সূত্রে দাবি, নতুন তারিখ দেওয়া মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ ছাপাখানা থেকে ফিরে যেত হোলসেলার রিনেস সারোগির কাছে। এরপর স্টকিস্টকে ওই ওষুধ দিয়ে দিতেন রিনেস। সেখান থেকে দোকানে দোকানে পৌঁছে যেত মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ। তারপরই সেই সব ওষুধ চলে যেত সাধারণ মানুষে হাতে।
অর্থাৎ অসাধু ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থার লাভ হত। যারা ‘মৃত’ ওষুধকে ‘জীবন্ত’ করত, তাদেরও লাভ হত। ক্ষতি হত শুধু সাধারণ মানুষের, যারা সরল বিশ্বাসে ওইসব ওষুধ কিনতেন!
ওষুধ ব্যবসায়ীর গুদাম ও ক্যানিং স্ট্রিটের ছাপাখানা থেকে সাড়ে তিন লক্ষ টাকার ৪ পেটি ট্যাবলেট ও ক্যাপসুল বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। সবগুলিই মেয়াদ উত্তীর্ণ এবং তারিখ রি প্রিন্ট করা!
৩টি ব্র্যান্ডের অ্যান্টিবায়োটিকের হদিশ পেল পুলিশ। সেগুলি হল-- কিউটেস ফোর্ট, অ্যান্টিব্যাক্ট-সিভি, পোডিক্স-সিভি। এই তিনটি ব্র্যান্ডের ওষুধ ক্যানিং স্ট্রিট থেকে উদ্ধার হয়েছে।
কিন্তু, দিনের পর দিন, সবার চোখকে ধুল দিয়ে কীভাবে চলত মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধের বেআইনি কারবার? হাওড়া পুরসভার ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর চৈতালি বিশ্বাসের দাবি, ওষুধের ব্যবসা করত জানতাম। এসব চলত জানতাম না। ধৃতদের জেরা করে চক্রে জড়িত বাকিদেরও খোঁজ চলছে। ধৃতদের ১৮ তারিখ পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।