পানাগড়: অদূর ভবিষ্যতে এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অবলম্বন করতে দেখা যাবে বর্ধমানের পানাগড়ে অবস্থিত বায়ুঘাটিকে। এমনই ইঙ্গিত মিলল বায়ুসেনার তরফে।

পানাগড়ের বায়ুঘাঁটির নাম পরিবর্তন করার অনুষ্ঠানে অংশ নিতে এসে এই ঘাঁটিকে ঘিরে বাহিনীর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কিছু ঝলক দিলেন ভারতীয় বায়ুসেনার ইস্টার্ন এয়ার কম্যান্ডের প্রধান (এওসি-ইন-সি, ইএসি) এয়ার মার্শাল সি হরি কুমার। তিনি ইঙ্গিত দেন, আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই পানাগড় বায়ুঘাঁটি (অধূনা এয়ার ফোর্স স্টেশন অর্জন সিংহ) দেশের আধুনিকতম বায়ুঘাঁটিগুলির অন্যতম হবে।

হরি কুমার জানান, কৌশলগতভাবে পানাগড়ের অবস্থান অন্যান্য বায়ুঘাঁটির থেকে আলাদা। কারণ, এটি দেশের একেবারে সীমান্ত-ঘেঁষা নয়। বরং, কিছুটা ভিতরে। ফলে, এখান থেকে বাহিনীকে যে কোনও দিকে পাঠানো (সামরিক পরিভাষায় মোবিলাইজ) সম্ভব। পাশাপাশি, এই ঘাঁটি শিল্প-শহর দুর্গাপুরের কাছে হওয়ায় সেখান থেকে বিভিন্ন পরিষেবা সহজেই পাওয়া যায়।

হরি কুমার জানান, আগামী বছরের মাঝামাঝি থেকেই বায়ুঘাঁটি পুরোদমে চালু হয়ে যাবে। তিনি বলেন, পরিকাঠামোর কাছে আগামী মাসেই শেষ হবে। এরপর বায়ুসেনা প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল অরূপ রাহা পরিদর্শন করবেন। তারপর আগামী বছরের অগাস্ট মাস নাগাদ বায়ুসেনার নতুন ৮৭ স্কোয়াড্রন এই ঘাঁটি থেকে কাজ শুরু করবে।

প্রসঙ্গত, পানাগড় ঘাঁটিকে বায়ুসেনার দৈত্যকায় ‘সি-১৩০ জে হারকিউলিস’ ভারী পরিবহণ বিমানের বেস হিসেবে ব্যবহার করা হবে। একটি হারকিউলিস ইতিমধ্যেই চলে এসেছে। আরও ৫টি বিমান আগামী বছরের এপ্রিল মাসের মধ্যে চলে আসবে বলে আশাপ্রকাশ করেন হরি কুমার।



পাশাপাশি, হারকিউলিসের নির্মাতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লকহিড মার্টিনকে দিয়ে বিমানের জন্য অত্যাধুনিক হ্যাঙ্গার (বিমান রাখার শেড) তৈরি করা হবে। একইসঙ্গে, মাথায় রাখা হবে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রয়োজনের। হরি কুমার জানান, অদূর ভবিষ্যতে এই বিমানঘাঁটিকে বায়ুসেনার বিভিন্ন স্ট্র্যাটেজিক এবং ট্যাক্টিক্যাল অভিযানে ব্যবহার করা হবে।

এয়ার মার্শালের কথা যে অমূলক নয়, তার প্রমাণ মিলেছে বায়ুসেনার আরেক আধিকারিকের কথায়। ওই আধিকারিক জানান, পানাগড়কে মেগা-বেস হিসেবে গড়ে তোলার ভাবনাচিন্তা রয়েছে বায়ুসেনার। তিনি জানান, যুদ্ধের সময় হারকিউলিস-এ করে দেশের উত্তর-পূর্বে বিভিন্ন সামগ্রী অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে পাঠানো সম্ভব হবে। একইভাবে, প্রয়োজনে ওই বিমানে করেই জওয়ানদেরও পাঠানো হবে।

চিন-সীমান্তের কথা মাথায় রেখে স্থলসেনা যে বিশেষ বাহিনী তথা মাউন্টেন স্ট্রাইক কোর (এমএসসি) গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার বেস-ও হবে এই পানাগড়। ফলে, হারকিউলিস-এ করে ওই বাহিনীকে একেবারে চিন-সীমান্তে অনায়াসে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে। আবার, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ও একইভাবে বিভিন্ন দুর্গম এলাকায় বাহিনী ও ত্রাণ-সামগ্রীকে পৌঁছে দেওয়া হবে। আবার মুর্শিদাবাদের নবগ্রামে সেনাবাহিনীর এডি স্টেশন এবং পানাগড়ের কাছে মৌরিপুরে কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা গবেষণা কেন্দ্র (ডিআরডিও)-র নিরাপত্তাও আঁটোসাঁটো হবে এই ঘাঁটি চালু হলে।

শুধু হারকিউলিস নয়, পানাগড়ে জ্বালানি-বহনকারী বিমানের একটি পৃথক স্কোয়াড্রনও থাকবে বলেও ইঙ্গিত মিলেছে। ওই অত্যাধুনিক মাল্টি রোল ট্যাঙ্কার ট্রান্সপোর্ট (এমআরআরটি) ‘এ৩৩০’ বিমান নির্মাণ করেছে ইউরোপীয় বিমান নির্মাণকারী সংস্থা এয়ারবাস। ফলে, অসমের তেজপুর এবং ছাবুয়াতে থাকা বায়ুসেনার সুখোই বিমানের সুবিধে হবে। মাঝ-আকাশে জ্বালানি ভরে নিতে পারলে তাদের কার্যকারিতার সীমা বৃদ্ধি পাবে।