কৌশিক গাঁতাইত, পশ্চিম বর্ধমান: করোনার তৃতীয় ঢেউ এরমধ্যেই চোখ রাঙাচ্ছে। বারবার করে প্রসূতিদের সতর্ক করে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু পশ্চিম বর্ধমানে জামুরিয়ায় এক অধ্যুষিত গ্রামের মহিলাদের মধ্যে রয়েছে কোভিড ভ্যাকসিন নিয়ে অনীহা।  পেশায় দিনমজুর জামুড়িয়ার ওই আদিবাসী মহিলাদের  মনে ভয় ছিল, শঙ্কা ছিল ভ্যাকসিন নিলে যদি কিছু হয় যায়। 


স্থানীয় স্কুল শিক্ষক দ্বীপনারায়ণ নায়েক এরপরই নিজেই এগিয়ে এলেন আদিবাসী মহিলাদের সচেতন করতে। ব্লক স্বাস্থ্য বিভাগের সাহায্য নিয়ে অনলাইনে ভ্যাকসিন শ্লট বুক করেন তিনি। এরপরে ভ্যাকসিন রথে গ্রামবাসীদের চাপিয়ে জামুড়িয়া আখলপুর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যান তিনি। শুধু তাই না ওই ১০০ জন আদিবাসী মহিলার হাতে ভ্যাকসিন নেওয়ার পর তুলে দেওয়া হল গিফট কুপন। আর জামুড়িয়ার ‘জবা’ গ্রামকে ঘোষণা করলেন সেফ ভিলেজ হিসেবে।


জামুড়িয়ার তিলকা মাঝি আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক দীপ নারায়ণ নায়ক। লকডাউনে স্কুল বন্ধ থাকায় গত দেড় বছর ধরে আদিবাসী পড়ুয়াদের নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় স্কুল চালাচ্ছেন তিনি। এক উদ্যোগ নিয়ে এই পঠন পাঠন করানোর জন্য এরমধ্যেই তিনি রাস্তার মাস্টার নামে খ্যাতি পেয়েছেন। শুধু আদিবাসী পড়ুয়াদের পাশে থাকা নয়, তিনি দিনমজুর আদিবাসী অভিভাবকদেরও পড়াশুনার ব্যবস্থা করেছেন। সামাজিক বিষয়ে সচেতনও করেন।


কিন্তু কোভিড ভ্যাকসিন নেওয়ার ক্ষেত্রেই দেখা দিল সমস্যা। ভ্যাকসিন নিতে অনীহা ছিল জামুড়িয়ার আদিবাসী গ্রামের মহিলাদের। ভ্যাকসিন নিতে গেলে মৃত্যুও হতে পারে এমনও কুসংস্কার রয়েছিল বাসিন্দাদের মধ্যে। শেষ পর্যন্ত নিজের ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট দেখিয়ে তাঁদের সচেতন করেন দ্বীপনারায়ণবাবু। ভ্যাকসিন নিতে রাজি হলেও রয়েছে ভ্যাকসিনের অপ্রতুলতা। সেই সমস্যা সমাধানে ব্লক স্বাস্থ্য দফতরের সাহায্য নিয়ে অনলাইন শ্লট বুক করেন তিনি। নিখরচায় গ্রামবাসীদের স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাসের ব্যবস্থা করলেন ওই শিক্ষক।  যার নাম দেওয়া হয়েছে ভ্যাকসিন রথ। ভ্যাকসিন নেওয়ার পর ঐ মহিলাদের হাতে তুলে দেওয়া হল টোকেন উপহার।


এলাকার মাস্টারের এই উদ্যোগে খুশি জামুড়িয়ার আদিবাসী গ্রামের বাসিন্দারা। এইভাবে আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া ও সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া গ্রামবাসীদের ধারাবাহিকভাবে ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করা হবে বলে আশ্বাস দেন শিক্ষক দ্বীপনারায়ণ নায়েক।