কমিশন সূত্রে খবর, ১৬ মে প্রয়োজন মতো পুনর্নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে।১৭ তারিখ পঞ্চায়েত ভোটের ফল ঘোষণা হতে পারে ।
শেষমেষ পঞ্চায়েত ভোটের দিন ঘোষণা হল। কিন্তু, নির্ঘণ্ট নিয়ে যাবতীয় জল্পনার অবসানের সঙ্গে সঙ্গে নির্ঘণ্ট নিয়ে বিতর্কও জোরালো হল। তার, কারণ রাজ্য সরকারের সুপারিশ মেনে মাত্র এক দফায় পঞ্চায়েত ভোট করাতে রাজি হয়ে গেল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। কিন্তু, এক দফায় ভোট হলে পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তা ব্যবস্থা মিলবে কী করে? প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য ৫৮ হাজার ৪৬৭টি বুথ হচ্ছে।
কিন্তু, রাজ্যের হাতে পুলিশ আছে মাত্র ৫৮ হাজার। তারমধ্যে ৪৬ হাজার সশস্ত্র পুলিশ। ১২ হাজার লাঠিধারী।
অর্থাৎ, এই হিসাব অনুযায়ী, সব বুথে একজন করে পুলিশ দেওয়াও কার্যত অসম্ভব।
এক দফায় ভোট হওয়ার অর্থ, পুলিশের স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর বা এসওপি মেনে চললে, মাত্র ২৩ হাজার বুথে সশস্ত্র পুলিশ মোতায়েন করা সম্ভব।
কারণ, এসওপি অনুযায়ী, ভোটের সময় কোনও বুথে এক জন সশস্ত্র পুলিশ রাখা যায় না। রাখলে অন্তত দু’জন রাখতে হয়। অর্থাৎ সেই হিসেবে ২৩ হাজার বুথের বেশি সশস্ত্র পুলিশ দেওয়া যাবে না।
তবে এসওপি ভেঙে বুথ প্রতি এক জন করে সশস্ত্র পুলিশ দেওয়া হলেও, ৪৬ হাজার বুথে সশস্ত্র পুলিশ থাকবে। বাকি ১২ হাজার বুথে শুধু এক জন করে লাঠিধারী পুলিশ থাকবে।
প্রাক্তন পুলিশ কর্তারা অবশ্য বলছেন, এই সংখ্যক পুলিশ দেওয়াও সম্ভব হবে না। কারণ, অন্যান্য কাজের জন্যও পুলিশ রাখতে হয়।
নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে অবশ্য রাজ্য সরকারের উপর দায় চাপিয়েই নিজেদের আড়াল করার চেষ্টা করেছে কমিশন। নির্বাচন কমিশনের সচিব নীলাঞ্জন শান্ডিল্য জানিয়েছেন, রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সরকারকে জানিয়েছেন, ভোটে যথেষ্ট নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে।
কিন্তু, এটুকু বলেই কি দায় ঝাড়তে পারে কমিশন? নির্বাচন ব্যবস্থা পরিচালনার সর্বোচ্চ দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংবিধানিক সংস্থা তো তারা! সব কিছু জেনে বুঝেও কী করে একদিনে ভোট করাতে রাজি হল তারা? প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।
সেইসঙ্গে নানামহলে এই প্রশ্নও উঠছে,রাজ্যে মনোনয়ন পর্বই যখন রক্তাক্ত হয়েছে, তখন কী করে একদিনে ভোট করানোর রাজ্য সরকারের প্রস্তাব মেনে নিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন?
যে কমিশন প্রথম বিজ্ঞপ্তিতে ৩ দিন ভোট করানোর ঘোষণা করেছিল, তারাই কি করে নবান্নের একদিনের ভোট করানোর প্রস্তাব মেনে নিল?
এ বিষয়ে কমিশন সূত্রের সাফাই,পঞ্চায়েত আইন অনুযায়ী রাজ্য সরকারের বিজ্ঞপ্তি জারির পর কমিশনের কিছু করার সংস্থান নেই।
কিন্তু, পাল্টা যুক্তিতে অনেকে বলছেন, ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটের সময় রাজ্য সরকারের সঙ্গে মতপার্থক্য হওয়ায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গিয়েছিলেন তৎকালীন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডে। শেষ অবধি কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়েই ভোট করিয়েছিলেন তিনি। তাহলে বর্তমান রাজ্য নির্বাচন কমিশনার কেন সুষ্ঠু ও অবাধ নিরাপত্তার স্বার্থে আইনি রাস্তায় হাঁটলেন না?
এছাড়াও, সূত্রের বক্তব্য বুথ পিছু ৫জন ভোটকর্মী লাগে।
অর্থাৎ একদিনে পঞ্চায়েত ভোট মানে ৫৮ হাজার ৪৬৭ গুণিত ৫, অর্থাৎ ২লক্ষ ৯২ হাজার ৩৩৫জন ভোট কর্মী লাগবে।
এত সংখ্যক ভোটকর্মী কীভাবে একদিনে পাওয়া যাবে?
প্রতি জেলায় একজন করে আইএএস অফিসারকে পর্যবেক্ষক হিসাবে চেয়েছে কমিশন। এবং ২টি ব্লক পিছু একজন করে ডব্লুবিসিএস অফিসারকে পর্যবেক্ষক হিসাবে চেয়েছে কমিশন।
একদিনে এত সংখ্যক আইএসএস এবং ডবলুবিসিএস অফিসারকে ভোটের কাজে পাওয়া কি সম্ভব?
সবমিলিয়ে একদিনে পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে এখন নানামহলে বিস্তর প্রশ্ন।