কলকাতা: গত কয়েকটি নির্বাচনের ফলে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, রাজ্যে দ্বিতীয় রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে উঠে আসছে বিজেপি। গ্রাম বাংলার ভোটে সেটাই আরও স্পষ্ট হল। রাজ্যের বেশ কয়েকটি জায়গায় নজরকাড়া সাফল্য পেল গেরুয়া শিবির।
ঝাড়গ্রামের সাঁকরাইল পঞ্চায়েত সমিতি তৃণমূলের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে তারা। গোপীবল্লভপুর পঞ্চায়েত সমিতিও দখল করেছে বিজেপি।
জেলা পরিষদ তৃণমূল দখল করলেও, পঞ্চায়েত দখলের প্রশ্নে তাদের কড়া টক্করের মুখে ফেলে দিয়েছে বিজেপি। সর্বশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, পুরুলিয়ায় বিজেপি ৩৬টি গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করেছে। যার প্রায় সবক’টিই ছিল তৃণমূলের দখলে। এই জেলায় তৃণমূলকে আপাতত থামতে হয়েছে, ৩৪টি পঞ্চায়েত পেয়ে। বলরামপুর, রঘুনাথপুর, সাতুরি, পারা, বরাবাজার, সাকা, জোড়ডিহি, নতুনডিহি, বাবুগ্রাম-সহ একাধিক এলাকায় তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ভাল ফল করেছে বিজেপি।
একই ছবি জঙ্গলমহলের আরেক জেলা ঝাড়গ্রামে। এখনও পর্যন্ত যা খবর তাতে, এখানে তৃণমূলের দখলে গিয়েছে ৪২টি পঞ্চায়েত। বিজেপি সেখানে পেয়েছে ২৫টি। ৯টি পঞ্চায়েত ত্রিশঙ্কু হয়েছে, তিনটির দখল নিয়েছে নির্দলরা। লালগড় ব্লকে তৃণমূলের ঘাড়ের ওপর নিঃশ্বাস ফেলছে বিজেপি। শাসক দল পেয়েছে ৫টি পঞ্চায়েত। বিজেপির দখলে চারটি। ত্রিশঙ্কু হয়েছে একটি পঞ্চায়েত।
বিজেপির কারণে বেলপাহাড়িতেও কঠিন লড়াইয়ের মুখে পড়তে হয়েছে তৃণমূলকে। গোপীবল্লভপুর ২ নম্বর ব্লকের কুলিয়ানা গ্রামে দিলীপ ঘোষের পৈত্রিক বাড়ি। সেখানকার গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে বিজেপি জয়ী হয়েছে।
শুধু জঙ্গলমহলই নয়, উত্তরবঙ্গেও বিজেপির শক্তিবৃদ্ধির ইঙ্গিত দেখা গিয়েছে। যে জেলা কংগ্রেসের দুর্ভেদ্য দুর্গ বলে পরিচিত, সেই মালদাতেই ২ নম্বরে উঠে এসেছে বিজেপি। কংগ্রেস চলে গিয়েছে তৃতীয় স্থানে।
এখনও পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী, মালদায় ৯৭৩টি পঞ্চায়েত আসনে জয়ী হয়েছে তৃণমূল। তাৎপর্যপূর্ণভাবে বিজেপি পেয়েছে ৫০২টি আসন। কংগ্রেস পেয়েছে ৩৫৯টি। বামেদের থামতে হয়েছে ১০৮টি আসনে। অন্যান্য ১০৬টি।
বিজেপির দাবি, পঞ্চায়েত ভোটের সার্বিক ফলই ইঙ্গিত দিচ্ছে, তৃণমূলকে সরিয়ে বাংলায় তাদের ক্ষমতায় আসা শুধু সময়ের অপেক্ষা। দিলীপ ঘোষ বলেন, আমরা ভাল ফল করেছি। আরেকটু ভাল হওয়া উচিত ছিল। তবে লোকসভায় আরও ভাল করব। ওই ভোটটা আমরা করাব।
কিন্তু, যে আসানসোল বিজেপির দখলে, যেখানকার সাংসদ কেন্দ্রীয়মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়, সেখানে পঞ্চায়েত ভোটে গেরুয়া শিবিরের কার্যত ভরাডুবি হয়েছে। পশ্চিম বর্ধমানে গ্রাম পঞ্চায়েতের ৩০১টি আসনের মধ্যে তৃণমূল ২৭৩টি, বিজেপি ১৩টি, সিপিএম ১২টি, কংগ্রেস ১টি এবং নির্দল ১টি আসন পেয়েছে।
তৃণমূল কটাক্ষের সুরে বলছে, কে দ্বিতীয় বা তৃতীয় স্থান দখল করল, তা নিয়ে তারা আদৌ চিন্তিত নয়। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনেও একই ভাবে তাদের প্রতি সমর্থন জানাবে বাংলার জনগন।