কৌশিক গাঁতাইত, পশ্চিম বর্ধমান: কুলটিতে হানা দিয়ে ৩৫ জন নাবালিকাকে উদ্ধার করল রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশন ও পুলিশ-প্রশাসন। কমিশন সূত্রে খবর, দেহ ব্যবসার জন্য আনা হয়েছিল ওই নাবালিকাদের। ঘটনায় কয়েকজন যুবককে আটক করেছে পুলিশ। কোথা থেকে, কীভাবে নাবালিকাদের দেহ ব্যবসার জন্য পাচার করা হয়েছিল, তার তদন্ত শুরু হয়েছে।
পাচার চক্রের হাত থেকে নাবালিকাদের উদ্ধার করেছিল রিলের মর্দানি। এবার রিয়েলে তাই ঘটল। রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সনের সঙ্গে অভিযান চালালেন জেলাশাসক ও পুলিশ কমিশনার। যৌথ অভিযানে উদ্ধার হল ৩৫ জন নাবালিকা। বুধবার রাতে এমনই ঘটনার সাক্ষী রইল পশ্চিম বর্ধমানের কুলটির লছিপুর এলাকা।
বুধবার ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত ১০টা। কুলটির লছিপুরে আচমকা হাজির হন রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশন, পুলিশ ও প্রশাসনের তাবড় আধিকারিকরা। পুলিশ সূত্রে খবর, তাঁদের দেখে পালানোর হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। নিমেষে ফাঁকা হয়ে যায় এলাকা। ভিতর থেকে উদ্ধার করে আনা হয় ৩৫ জন নাবালিকাকে।
রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তীর কথায়, ' খবর পেয়েছিলাম পাঁচ ছয় জন নাবালিকাকে দেহব্যবসায় নামানো হয়েছে । সেই অনুযায়ী তল্লাশি অভিযান। ৩৫ জন নাবালিকাকে উদ্ধার করা হয়েছে। এই ঘটনায় কয়েকজন যুবককে আটক করেছে পুলিশ।
পশ্চিম বর্ধমানের জেলাশাসক বিভু গোয়েল জানিয়েছেন, সমস্ত ঘটনার তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। দুর্গাপুর থেকে ৫৫ কিলোমিটার দূরে কুলটির লছিপুরে নাবালিকা পাচার চক্রে জড়িত কারা? খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
কিছুদিন আগেই বাঁকুড়ার কালপাথর এলাকায় থাকা কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালিত জওহর নবোদয় বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষর বিরুদ্ধে শিশু পাচারের মতো গুরুতর অভিযোগ ওঠে। গ্রেফতার হন ওই স্কুলের অধ্যক্ষ কমল কুমার রাজোরিয়া সহ ওই স্কুলেরই আরেক শিক্ষিকা। ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হয় দুর্গাপুরের মেনগেট এলাকার আরও ৬ বাসিন্দা। উদ্ধার হয় পাঁচটি শিশু। একটি নামজাদা স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিশু পাচারের মতো গুরুতর ঘটনায় যুক্ত থাকার প্রমাণ মেলায় বিষয়টিতে তড়িঘড়ি পদক্ষেপ করে শিশু সুরক্ষা কমিশন।
বাঁকুড়ার শিশু পাচারকাণ্ডে তিন অভিযুক্তকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে তদন্ত শুরু করে সিআইডি। তদন্তের জন্য স্কুলে গেলেন সিআইডির আধিকারিকরা। অন্যদিকে ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক তরজা অব্যাহত। এ দিকে শিশু পাচারকাণ্ডে অভিযুক্ত সতীশ ঠাকুরের বক্তব্যে নতুন করে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর।
উল্লেখ্য শিশু পাচারকাণ্ডে পদক্ষেপ নিয়েছে শিশু সুরক্ষা কমিশন। ২০ জুলাই কমিশনের চেয়ারম্যান অনন্যা চক্রবর্তীর নেতৃত্বে শিশু সুরক্ষা কমিশনের একটি দল বাঁকুড়ায় যান। এ দিন বাঁকুড়া সার্কিট হাউসে প্রথমে কমিশনের চেয়ারম্যান বৈঠক করেন প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে। পরে উদ্ধার হওয়া শিশুদের দেখতে হোমে যান কমিশনের প্রতিনিধি দল। এ দিকে শিশু পাচার কান্ডে দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবিতে পথে নামে গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি ও এ আই ডি এস ও।