বর্ধমান: নবান্নের কড়া অবস্থানের পর তৎপর বর্ধমান জেলা পুলিশ প্রশাসন। অতিরিক্ত বিলের জেরে রোগীর বাবার আত্মহত্যার অভিযোগে, গ্রেফতার বর্ধমানের পি জি নার্সিংহোমের ৩ মালিক-সহ ৪ জন। ধৃতদের মধ্যে রয়েছেন- শেখ জয়নাল আবেদিন, মুন্সি মহম্মদ হাসিবুল কবীর, আব্দুল খতিপ নামে নার্সিংহোমের ৩ মালিক এবং সৌভিক সাঁতরা নামে এক নার্সিংহোম কর্মী।
রবিবার, বর্ধমান ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ সঞ্জয় কোনার নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে ৪ জনের বিরুদ্ধে, আত্মহত্যায় প্ররোচনা ও জোর করে টাকা আদায়ের ধারায় মামলা রুজু হয়েছে।
যদিও অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবীর দাবি, এক্ষেত্রে এইসব ধারা প্রযোজ্য নয়। কারণ, পরিষেবা দিয়ে টাকা নেওয়া এক্সটরশান নয়। গ্রেফতারির আগে নার্সিংহোমের এক মালিকও সব অভিযোগ অস্বীকার করেন।
এদিন আদালতে তোলা হলে হাসপাতালের ৩ কর্মীকে ২দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠানোর নির্দশ দেন বিচারক। ধৃত নার্সিংহোম কর্মীর ২৮ তারিখ পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশ।
১৭ ফেব্রুয়ারি, বীরভূমের রামপুরহাট হাসপাতালে সন্তান প্রসব করেন ঝাড়খণ্ডের মলুটির বাসিন্দা চুমকি লেট। পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। রোগীকে নিয়ে যাওয়ার জন্য সরকারি প্রকল্পে বিনামূল্যে অ্যাম্বুল্যান্সও দেওয়া হয় বলে দাবি রামপুরহাট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।
কিন্তু, ভুল করে এক বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স চালকের কাছে চলে যায় রোগীর পরিবার। বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স চালকের পরামর্শে মেয়েকে বর্ধমানের পিজি নার্সিংহোমে নিয়ে যান তপন লেট। অভিযোগ, কয়েকদিনের মধ্যে ৪২ হাজার টাকা বিল করে নার্সিংহোম। টাকা জোগাড় করতে না পেরে তপন লেট আত্মঘাতী হন বলে অভিযোগ পরিবারের।
ইতিমধ্যে ঘটনা নিয়ে স্বাস্থ্য দফতরকে রিপোর্ট পাঠিয়েছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক। এর পাশাপাশি অ্যাম্বুল্যান্স চালকের ভূমিকাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে রেফারের পরও কেন পিজি নার্সিংহোমে নিয়ে গেলেন অ্যাম্বুল্যান্স চালক?
পুলিশ সূত্রে দাবি, এর নেপথ্যে রয়েছে একটি চক্র। যেখানে মূলত টার্গেট করা হয় হতদরিদ্র রোগীর পরিবারকে। তাদের ভুল বুঝিয়ে এই ধরনের নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়। তার পরিবর্তে কমিশন পান অ্যাম্বুল্যান্স চালক। পিজি নার্সিংহোমের ক্ষেত্রেও এমনটা ঘটেছে বলে প্রাথমিক তদন্তে অনুমান পুলিশের।