নয়াদিল্লি: মুখ্যমন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে উঠে এল রাজ্যের নামবদলের প্রসঙ্গ। বৈঠকের পর জানালেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। 


মঙ্গলবার, আধঘণ্টার বেশি সময় ধরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক হয়। বেরিয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, কলাইকুন্ডায় দেখা হয়নি। তাই এখন সৌজন্য সাক্ষাৎ হল। 


এদিন প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে মোদির সঙ্গে মমতার বৈঠক হয়। প্রসঙ্গত, ভোটের পরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রথম বৈঠক হল মুখ্যমন্ত্রীর। এই বৈঠক ঘিরে তুমুল জল্পনা ছিল দেশের রাজনৈতিক মহলে। 


মুখ্যমন্ত্রী জানান, রাজ্যের নামবদলের বিষয়টি তদ্বির করতে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন তিনি। বলেন,  ‘বাংলার নাম বদল নিয়েও প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়েছি। বহুদিন ধরে বিষয়টি পড়ে আছে বলে প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি দেখবেন বলে জানিয়েছেন।’


এপ্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া দিতে দেরি করেনি বিজেপি। এদিন রাজ্য বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য বলেন, দল হিসেবে বিজেপি চিরকাল পশ্চিমবঙ্গের নামবদলের বিরুদ্ধে। পশ্চিমবঙ্গ নাম বদল হলে আমরা একটা ইতিহাসকে ভুলিয়ে দেব। আমরা একটা প্রজন্মর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করব। 


শমীক যোগ করেন, পশ্চিমবঙ্গ নামের মধ্যেই অনেক রক্তাক্ত ঘটনা লুকিয়ে আছে। পশ্চিমবঙ্গের কোটি কোটি মানুষকে গৃহহীন হতে হয়েছিল। এখনও বহু মানুষ সেই যন্ত্রণায় ভুগছেন। ফলে, যেভাবে পশ্চিমবঙ্গ তৈরি হয়েছিল, যেভাবে তা তৈরি করেছিলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, আজ নামবদল হলে, সেই ইতিহাসকেই ভুলিয়ে দেব। 


প্রায় দু’বছর পর সোমবার বিকেলে দিল্লিতে পা রাখেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতা দখলের পর তাঁর এটাই প্রথম দিল্লি সফর।


পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি থেকে কেন্দ্রের ৩ কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে সরগরম রাজধানীর রাজনীতি। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এই সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিল্লি সফর নিঃসন্দেহে রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।


এর আগে, এদিন দুপুরে কমলনাথ ও আনন্দ শর্মার সঙ্গে বৈঠক করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ সন্ধ্যায় অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির সঙ্গে সাক্ষাতের সম্ভাবনা রয়েছে মমতার। 


আগামীকাল শরদ পাওয়ার, সঞ্জয় রাউতের সঙ্গে বৈঠকের সম্ভাবনা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। পাশাপাশি, এনসিপি, শিবসেনার সঙ্গে আলাদা করে বৈঠকের সম্ভাবনা তৃণমূলনেত্রীর।


তিনি আরও বলেন, ইতিহাসকে এভাবে মুছে ফেলা য়ায় না। আমরা এই নাম বদলের বিরুদ্ধে। অতীতে বাম জমানাতেও যখন এই প্রস্তাব এসেছিল, তখনও আমরা আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছি। 


মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘কলাইকুন্ডায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কোনও কথা হয়নি। ভোটের পর দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ হল। এদিনের সাক্ষাতে করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে কথা হয়েছে। 


মমতা জানান, আরও ভ্যাকসিনের প্রয়োজনের কথা তিনি প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন। বললেন, ‘আরও করোনার ভ্যাকসিনের প্রয়োজন, একথা জানিয়েছি। জনসংখ্যা বেশি, অন্য রাজ্যের তুলনায় কম ভ্যাকসিন পেয়েছি। ভ্যাকসিনের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছি।’


মমতা আরও বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য আরটি পিসিআর করা দরকার। আমার ডবল ডোজ নেওয়া আছে, কিন্তু করোনা টেস্ট করাব কোথায়? এখন না হলে পরে না হয় দেখা করব, রাষ্ট্রপতি সুস্থ থাকুন।’


কাল বিকেল ৪.৩০টায় সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠক হওয়ার কথা। তার আগে, কাল কাল দুপুর ১টায় সুখেন্দু শেখরের বাসভবনে সংসদীয় দলের বৈঠকে থাকবেন মমতা। 


এরপর কাল দুপুর ২.৩০টায় সাংবাদিক বৈঠক করতে পারেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের সম্ভাবনা মুখ্যমন্ত্রীর। 


এপ্রসঙ্গেও কটাক্ষ করেছে বিজেপি। শমীক বলেন, মোদি বিরোধিতা করে যাঁরা ময়দানে নেমে পড়েছেন, তাঁরা আগে ঠিক করুন, তাঁদের মুখ কে হবেন, নেতা কে হবেন। প্রত্যেকেই নিজ নিজ রাজ্য়ে আলাদা লড়বেন, সেখানে কোনও সমঝোতা হবে না। 


তিনি যোগ করেন, ভারতবাসী জোট সরকার দেখেছে। এক্সপেরিমেন্ট দেখেছে। তাঁর থেকে মানুষ শিক্ষা নিয়েছেন।