কলকাতা: কিষাণ নিধি প্রকল্প নিয়ে বাংলাকে আক্রমণ করার কিছুক্ষণের মধ্যেই নরেন্দ্র মোদিকে জবাব ফেরাল তৃণমূল কংগ্রেস।

এদিন দেশের কৃষকদের সঙ্গে ভার্চুয়াল কনফারেন্স করলেন নরেন্দ্র মোদি। সেখানেই পশ্চিমবঙ্গের কৃষকরা যে কৃষক সম্মান নিধি প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকছেন, তার কারণ হিসেবে রাজ্য সরকারের বিরোধিতাকেই দায়ী করেন প্রধানমন্ত্রী।


মোদির অভিযোগ, সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে টাকা পাচ্ছেন না বাংলার কৃষকরা। বলেন, ‘এ কথা দেশের সামনে বলতে আমার কষ্ট হচ্ছে। ‘ এই রাজনৈতিক বিচারধারার জন্যই বাংলার এমন অবস্থা।’


মোদিক এই সমালোচনার জবাব দিয়েছে রাজ্যের শাসক দল। তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় এদিন জানিয়ে রাখেন, মোদির দাবি সর্বৈব মিথ্যা। তিনি বলেন, টাকা রাজ্যের মাধ্যমে দিতে ইতিমধ্যেই কেন্দ্রকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁর প্রশ্ন, রাজ্য টাকা দেবে আর কেন্দ্র সুবিধা নেবে?


কেন্দ্রের কৃষি নীতির তীব্র সমালোচনা করেন সৌগত। বলেন, ‘ফসল ফলানোর আগেই ঠিক হয়ে যাবে দাম। বাজারে ফসলের দাম বাড়লে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন কৃষকরা। পুঁজিপতিরা আগের দামে ফসল কিনে নিয়ে চলে যাবে। সরাসরি কৃষকদের টাকা কেন দেওয়া হবে? নাম কেনার জন্য ?’


এদিন ৯ কোটি কৃষকের অ্যাকাউন্টে প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি যোজনার দ্বিতীয় কিস্তির ১৮ হাজার কোটি টাকা পাঠান প্রধানমন্ত্রী। কেন্দ্র জানিয়েছে, প্রত্যেক কৃষকের অ্যাকাউন্টে ৬ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।


এপ্রসঙ্গে সৌগতর কটাক্ষ, ‘৬০০০ টাকা দিয়ে এমন ভাব করছে যেন ৬ লক্ষ টাকা দেওয়া হচ্ছে।’ তৃণমূল সাংসদ মনে করিয়ে দেন, ‘বাংলার কৃষকরা অনেক বেশি টাকা পাচ্ছে।’


এদিন মোদি তাঁর ভাষণে দাবি করেন, রাজনৈতিক বিচারধারার জন্যই বাংলার কৃষকদের এমন দুরবস্থা। জবাবে সৌগত বলেন, ‘মোদির বক্তব্য অন্তঃসারশূন্য, অসত্য।’ তাঁর পাল্টা দাবি, ‘বাংলায় কৃষক বন্ধু প্রকল্পে ২৬০০ কোটি টাকা আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়েছে। বাংলার ৪৭ লক্ষ কৃষক এই প্রকল্পে উপকৃত হয়েছে।


তিনি যোগ করেন, ‘শুধুমাত্র ৬০০০ টাকা দিয়ে নাম কিনতে চাইছেন নরেন্দ্র মোদি। বাংলায় ১০ বছর মমতার সরকারে কোনও কৃষক আন্দোলন হয়েছে?


মোদি প্রশ্ন করেন, প্রকল্পের টাকা না পাওয়ার জন্য কেন পশ্চিমবঙ্গের কৃষকরা রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন না?’ এর জবাবে সৌগত বলেন, ‘বাংলায় সরকারের বিরুদ্ধে কৃষকদের কোনও অভিযোগ নেই। বাংলায় বাজেটে কৃষকদের জন্য ৫ গুণ বৃদ্ধি হয়েছে।’


সৌগত বলেন, ‘মহারাষ্ট্রে কৃষকরা আত্মহত্যা করছে। কৃষি আইনে কৃষি পণ্যের ব্যবসাকে তুলে দিচ্ছে। অন্য আইনের মাধ্যমে চুক্তি চাষ চালু করার চেষ্টা কেন্দ্রের।’


তিনি আরও বলেন, ‘মূল বিষয় থেকে সরে যাচ্ছেন মোদি বলেও দাবি করেন সৌগত। বলেন, অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইনে আলু-পেঁয়াজকে বাইরে রাখা হয়েছে। কৃষকরা এই তিনটি আইনের প্রত্যাহার চেয়েছে।’


এদিন মোদি প্রশ্ন করেন, ‘তৃণমূল কংগ্রেস কেন পঞ্জাবে গিয়ে আন্দোলনের পাশে? জবাবে সৌগত বলেন, ‘কৃষকদের কাছে তৃণমূলের প্রতিনিধি পাঠানো হয়েছে। দেশের ১১টি রাজনৈতিক দল মোদিকে চিঠি লিখেছে। কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবি তোলা হয়েছে।’


উত্তরে সৌগত বলেন, ‘মোদির কথায় চিড়ে ভিজবে না। চালাকি করে কৃষক আন্দোলন ভাঙা যাবে না। তাঁর কটাক্ষ, বিজেপি চায় সব রাজ্য অধিকার করতে। ফড়েরা থাকবে না, শুধু অম্বানি-আদানিরা থাকবে। ‘কৃষি বিরোধী আইন রাজ্যসভায় গায়ের জোরে পাস করেছে কেন্দ্র।’


এদিন ট্যুইটে খোঁচা দিয়ে রাজ্য বিজেপির সহকারী পর্যবেক্ষক অমিত মালব্য মন্তব্য করেন, পিসির ইগোর কারণেই রাজ্যের কৃষকদের এই দুর্দশা। তিনি লেখেন, রাজ্যের ৭২ লক্ষ চাষির মধ্যে ২৩ লক্ষ নিজেরা নাম নথিভুক্ত করেছেন। যদিও তাদেরকে স্বীকৃতি দেননি পিসি।


সৌগত জানিয়ে রাখেন, ‘অমিত মালব্য কে কোথা থেকে এসেছি, জানি না। অমিত মালব্য জানেন না বাংলার কৃষকদের আয় বেড়েছে। অন্য রাজ্যের তুলনায় বাংলার কৃষকদের আয় বেড়েছে।