কলকাতা: মানব সভ্যতা এখন এক চরম সঙ্কটের মুখে। এরইমধ্যে বাঙালির মনের-উৎ‍সব, প্রাণের উৎ‍সব! এ যেন এক উভসঙ্কট। মা দুর্গা সবসময়ই তাঁর সন্তানদের মঙ্গল চান। কিন্তু, করোনা সেই সন্তানদের ওপরই আঘাত হেনেছে। আর এখন এই ভাইরাস ওত পেতে আছে।


একটু বিধি-নির্দেশ অমান্য, সঙ্গে সঙ্গে তার খপ্পরে। এই প্রেক্ষাপটে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ সব পুজো মণ্ডপকেই এবার সর্বসাধারণের জন্য ‘নো-এন্ট্রি’ করতে হবে। অর্থাৎ‍ দর্শক শূন্য পুজো মণ্ডপ।


আদালতের রায়কে স্বাগত জানিয়ে তৃণমূলকে আক্রমণ করেছে বিজেপি। দলের রাজ্য সহ সভাপতি প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, কোর্টের রায়কে স্বাগত জানিয়েছে। রাজ্যের পরিকল্পনা নেই। কোর্ট বলা সত্ত্বেও পরিকল্পনা নেই।


দমদম তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ সৌগত রায় বলেন, কোর্ট নির্দেশে দিয়েছে রাজ্য সরকারকে। পুজো সংগঠকদের কিছু বলেনি। সরকার রায় বিবেচনা করে যা নির্দেশ দেবে, পুজো সংগঠকগুলো তাই মানবে। তবে বলছি তো জাতীয় উত্‍সব বন্ধ করা উচিত হবে না। লক্ষ লক্ষ মানুষের আনন্দে ভাটা পড়বে এটা উচিত নয়।


পুজো নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের রায়কে স্বাগত জানিয়েছে সিপিএম। মুখ্যমন্ত্রী ভার্চুয়াল মাধ্যমে পুজো উদ্বোধন করবেন, আর সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে সংক্রমিত হবেন কেন? প্রশ্ন তুলেছে বামেরা। দলের কেন্দ্রীয় কমিটি সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, হাইকোর্টের রায়কে স্বাগত জানাচ্ছি। চিকিত্‍সক থেকে বিজ্ঞানী সবাই আশঙ্কা প্রকাশ করছিলেন যে সংক্রমণ ভয়ঙ্কর আকার নিতে পারে। মুখ্যমন্ত্রী নিজে ভিডিও কনফারেন্সে উদ্বোধন করছেন। তিনি ভার্চুয়াল আর বাকিরা রাস্তায়! সবটাই ভোটের রাজনীতি। টাকা দিয়ে উত্‍সাহিত করলেন। অন্য রাজ্য যেখানে সতর্ক হল সেখান আমরা পারব না কেন? এই রায়কে মান্যতা দিতে হবে।


দুর্গাপুজো মানে শুধু আনন্দই নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন-জীবিকা! রুজি-রুটি! মানুষ ঠাকুর দেখতে রাস্তায়, বেরোয়, তাই হাজার হাজার মানুষের পেট ভরে। ২০১৩ সালে বণিকসভা ‘অ্যাসোচ্যাম’-এর রিপোর্ট অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গেয় পুজোর অর্থনীতি প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা।


অ্যাসোচ্যামের রিপোর্টে বলা হয়েছিল, দুর্গাপুজোর অর্থনীতির বার্ষিক বৃদ্ধির হার নাকি ৩৫ শতাংশ। অর্থাৎ‍ সেই হিসাব অনুযায়ী, এখন দুর্গাপুজোর অর্থনীতি প্রায় দেড় লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছনোর কথা! অর্থাৎ‍ এ যেন জীবনের সঙ্গে জীবিকার লড়াই। উভয়-সঙ্কট।


এপ্রসঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, মানুষকে মানতে হবে, এবার পুজো উত্‍সবের ঢঙে করা সম্ভব নয়। বাংলায় গোষ্ঠী সংক্রমণ হচ্ছে।এটা ভয়ঙ্কর। যে জায়গায় যাচ্ছে, তাতে নিজেকে বাঁচাবে না পুজো করবে? হাইকোর্ট একদম ঠিক রায় দিয়েছে। কিন্তু সরকার তো প্যান্ডেল তৈরির জন্য টাকা দিচ্ছে। কীভাবে এই রায় মানা সম্ভব দেখতে হবে। মানুষকে উত্‍সবমুখর মানসিকতা ত্যাগ করতে হবে।


তৃণমূলের দাবি, করোনা সংক্রমণকে বাঁচিয়েই সরকার চেয়েছিল পুজো হোক। কিন্তু সেই প্রচেষ্টা ধাক্কা খেল। তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ সৌগত রায় বলেন, হতাশা ব্যাঞ্জক। পুজো সংগঠক, মানুষ ও দর্শনার্থীদের জন্য হতাশার। সরকার চেয়েছিল পুজো হেক। তাই ৫০ হাজার টাকা করে দিয়েছিল। দমকল, বিদ্যুত্‍ ফ্রি করেছিল। সরকার পুজো চেয়েছিল। করোনাও যাতে না বাড়ে। সেই প্রচেষ্টায় ধাক্কা দিল। এই রায়ের পর মণ্ডপ পর্যন্ত যাবে। বাইরে থেকে দেখবে। মানুষের উত্‍সাহ ধাক্কা খেল।


আবার বিজেপি সাংসদ ও কেন্দ্রীয়মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় বলেন, বাংলার যা অবস্থা তাতে এই নির্দেশ এক্কেবারে সঠিক। সল্টলেকের ইজেডসিসি-তে দুর্গাপুজোর আয়োজন করেছে বিজেপি। পুজোর পাশাপাশি রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও। জোর কদমে চলছে সেই প্রস্তুতি। এই প্রসঙ্গে দলের নেতা সব্যসাচী দত্ত আদালতের নির্দেশ মেনেই হবে। কালচারাল প্রোগ্রাম নিয়ে তো কোর্ট কিছু বলেনি।


বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎ‍সব। তা নিয়ে হাইকোর্টের রায়। সেইসঙ্গে তুঙ্গে রাজনৈতিক তরজা।