পূর্ব বর্ধমান: বিয়ে হয়েছিল মাত্র এক বছর চার মাস আগে। গর্ভে এসেছিল সন্তান। কিন্তু, মা হওয়ার সুখ আর ভোগ করতে পারলেন না পূর্ব বর্ধমানের তালিতের বাসিন্দা জান্নাতুন খাতুন। অভিযোগ, পণের দাবিতে শ্বশুরবাড়ির চাপ এমন জায়গায় পৌঁছেছিল, তা সহ্য করতে না পেরে সোমবার আত্মহত্যা করেন তিনি।
এমএ পাস করা জান্নাতুনের স্বপ্ন ছিল, বিয়ের পরও পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া। কিন্তু, মুদি ব্যবসায়ী স্বামী শেখ মনসুর আলির তা নিয়ে কোনও আগ্রহ ছিল না। অভিযোগ, বিয়ের আগেও মেয়ের শিক্ষাগত যোগ্যতা জানার বদলে তিনি ব্যস্ত ছিলেন পণ নিয়ে কথা বলতে।
মৃতার বাবা সফি মকবুল হোসেনের দাবি, ১ লক্ষ টাকা, ২০ ভরি সোনা চায়। আমি ৮০ হাজার টাকা, ১৫ ভরি সোনা দিই। আসবাব পছন্দ হয়নি। বিয়ের দিন নতুন আসবাব দিই।
অভিযোগ, মুদি ব্যবসায়ী মনসুর একেবারে হিসেব করে রেখেছিল পণ বাবদ কী কী পাওয়া বাকি। আর তা নিয়েই জান্নাতুনের ওপর লাগাতার মানসিক চাপ তৈরি করতেন তিনি।
জান্নাতুনের গর্ভে সন্তান আসার পরেও পরিস্থিতি বদলায়নি। তাঁর খেয়াল রাখার বদলে, শ্বশুরবাড়ির লোকেরা তাঁকে কার্যত ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন বলে অভিযোগ। আসতে থাকে ডিভোর্সের হুমকি। মৃতার বাবা বলেন, অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর বাপের বাড়ি পাঠায়। কয়েকদিন আগে বাড়িতে এসে বলে ডিভোর্স পেপারে সই করে দিন, নাহলে টাকা দিন।
সোমবার বাপের বাড়িতে অন্তঃসত্ত্বা জান্নাতুনের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। পরিবারের দাবি, শ্বশুরবাড়ির মানসিক চাপই তাঁকে এই মর্মান্তিক পরিণতির দিকে ঠেলে দিয়েছে। থানায় অভিযোগও দায়ের করেন তাঁরা। তার ভিত্তিতে জান্নাতুনের স্বামী, শ্বশুর ও এক আত্মীয়কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
কিছুদিন আগে কন্যাশ্রী প্রকল্পের হাত ধরে বিশ্বের দরবারে সেরার স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলা। কিন্তু, সেই রাজ্যে পণের জন্য কন্যাদের এই পরিণতি অনেককেই ভাবাচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, বাল্যবিবাহের মতো পণপ্রথা রুখতেও সচেতনতা প্রচারে কন্যাশ্রীদের কাজে লাগাক প্রশাসন।
অনেকে বলছেন, পণের অসুখ সারাতে সচেতনতা বৃদ্ধির সঙ্গে চাই মানসিকতায় বদল। সেটা না হওয়া পর্যন্ত কি আদৌ পরিস্থিতি বদলাবে?