কলকাতা: উমপুনের দাপটে রাজ্যের একাধিক জেলায় ধান ও সবজি চাষে ব্যাপক ক্ষতি। যার জেরে এক সপ্তাহে হু হু করে বেড়েছে সবজির দাম। বাজারে গিয়ে চোখ কপালে ওঠার জোগাড় সাধারণ মানুষের।

উমপুনের তাণ্ডবে বিঘার পর বিঘা জমিতে নষ্ট হয়েছে ফসল। মাঠের জিনিস এখন পচছে মাঠেই। তার প্রভাব সরাসরি পড়তে শুরু করেছ বাজারে এবং সাধারণ মানুষের পকেটে। লকডাউনের জেরে বাজারে সবজির জোগান এমনিতেই কিছুটা কম ছিল। তার মধ্যে গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো হাজির হয়েছে উমপুন। জোড়া ধাক্কায় বাজারে জোগান কমতেই, বাড়তে শুরু করেছে সবজির দাম।

একেই লকডাউনে মানুষের হাতে টাকার জোগান কম। তার মধ্যে সবজির মূল্যবৃদ্ধি অনেকেরই কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। কলকাতার অন্যতম বড় সবজি বাজার গড়িয়াহাট বাজার। গত সপ্তাহে এখানে পটলের দাম ছিল কেজি প্রতি ২৫-৩০ টাকা। এখন সেই দাম বেড়ে হয়েছে কেজি প্রতি ৫০-৬০ টাকা। বেগুনের দামও কেজি প্রতি ২৫-৩০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৫০ টাকা। ঢেঁড়স, পেঁপে, টমেটোরও দাম ঘোরাফেরা করছে কেজি প্রতি ৫০ টাকার আশেপাশে। শসা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজিতে। ঝিঙের দাম ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি। গত সপ্তাহেও লঙ্কার দাম ছিল কেজি প্রতি ৫০ টাকা। এখন তা ঘোরাফেরা করছে কেজি প্রতি ৮০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে।

লাগামছাড়া দাম শুনেই ভিরমি খাওয়ার জোগাড় সাধারণ মানুষের। শুধু সবজি নয়, মাছ-মাংস কিনতে গিয়েও ছেঁকা লাগছে। কাটা মুরগির মাংসের দাম আড়াইশো টাকা কেজি। পাবদা, পারশে, ট্যাংরা, ভেটকির দাম বাড়তে বাড়তে পৌঁছেছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজিতে। অনেকে বলছেন, জেলায় জেলায় যা পরিস্থিতি, তাতে কতদিনে সবজির জোগান স্বাভাবিক হবে, তা বলাই যাচ্ছে না। হাওড়া জেলা কৃষি দফতর সূত্রে খবর, ঝড়ে প্রায় চার হাজার হেক্টর জমিতে সবজির ক্ষতি হয়েছে। তেরোশো হেক্টর জমিতে ভেঙে পড়েছে পানের বরজ। সবমিলিয়ে প্রাথমিকভাবে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৯০ কোটি টাকা।

হুগলি জেলা কৃষি দফতর সূত্রে খবর, সিঙ্গুর ব্লকে ৬৯০ হেক্টর জমির সবজি, ৮১৪ হেক্টর জমির তিল ও ১৫৩ হেক্টর জমির ডালশস্যের পুরোপুরি ক্ষতি হয়েছে। জেলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৬০০ কোটি টাকা। উদ্বেগ বাড়িয়ে কৃষিকাজে এই বিপুল ক্ষতির ধাক্কা এবার পড়তে শুরু করেছে মধ্যবিত্তের পকেটেও। এই পরিস্থিতি কতদিনে স্বাভাবিক হবে, সেই উত্তর আপাতত নেই কারও কাছেই।