রানা দাস, পূর্ব বর্ধমান: অমানবিকতার চূড়ান্ত নিদর্শন সরকারি হাসপাতালে। অস্ত্রোপচারের আগে প্রসূতিদের যে ইঞ্জেকশন দিতে হয় তাই নাকি নই হাসপাতালে। পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ। ইঞ্জেকশন না থাকায় সরকারি হাসপাতালে ৬ প্রসূতি চিকিৎসা পাননি বলেই অভিযোগ। কেন এমন হল,  জানতে শোকজের করেছেন মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক। আর এনিয়েও শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা।


কেউ যন্ত্রণায় ছটফট করছেন, যন্ত্রণার চোটে কারও চোখ ফেটে বেরিয়ে আসছে জল। মুখ্যমন্ত্রীর বারবার আবেদন সত্ত্বেও  ফের অমানবিকতার ছবি সরকারি হাসপাতালে। পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি না নিয়ে ফেরত পাঠানো হল প্রসূতিদের।


প্রসব যন্ত্রণা ওঠায় মঙ্গলবার সাত সকালে হাসপাতালে ভর্তি হতে এসেছিলেন ৬ জন প্রসূতি। কিন্তু বেলা গড়িয়ে গেলেও, ভর্তি হতে পারেননি কেউই! অভিযোগ, প্রসূতিদের ভর্তি না নিয়ে নার্সিংহোম অথবা অন্য হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেয় কাটোয়া মহকুমা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। প্রসূতি সুনীতা দাস জানান, ‘‘বলছে বাড়ি চলে যাও, নাহলে বর্ধমানে যাও৷’’


এক প্রসূতির আত্মীয় এনামুল রহমান জানান, ‘‘ভোর ৫টায় এসেছি, ভর্তি করেছিল, ১১টার সময় বলে হয় নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া অথবা বর্ধমানে নিয়ে যাও। নার্সিংহোমের ইনকামের জন্যই এসব করছে ৷’’


অস্ত্রোপচারের আগে প্রসূতিদের যে ইঞ্জেকশন দিতে হয়, কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে তা সরবরাহ করেন এই ব্যক্তি। প্রসূতিদের ভর্তি না নিয়ে, অন্য জায়গায় কেন চলে যেতে বলা হয়েছে, তা প্রসঙ্গে চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন। হাসপাতালে ইঞ্জেকশন সরবরাহকারী ঠিকাদার কিংশুক মণ্ডল জানান, ‘‘দীর্ঘদিন টাকা বকেয়া রয়ে গেছে, তাই ইঞ্জেকশন সরবরাহ করছি না। ইঞ্জেকশনের দাম মাত্র ২৮-৩০ টাকা ৷’’


সারাদিন ধরে হাসপাতালের সামনে কাতরালেন প্রসূতিরা, অথচ তাঁদের দুর্ভোগ নিয়ে যেন কোনও ভ্রুক্ষেপই নেই হাসপাতাল সুপারের। কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালের সুপার নবারুণ গুপ্ত জানান, ‘‘ইঞ্জেকশন নেই,  আমরা আনিয়েছি, তা ছাড়াও সিজার হয়,  কেন এমন হল বুঝতে পারছি না। আমরা জানি না কেন হচ্ছে, আমরা আবার ইঞ্জেকশন এনে রোগী ভর্তি করব।’’


মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জানিয়েছেন,এভাবে রোগী ফেরত পাঠানো যায় না। ইঞ্জেকশন না থাকলে বাইরে থেকে কিনে এনেও চিকিৎসা করতে হবে। যাঁরা এর সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের শোকজ করতে হবে। হাসপাতালে প্রসূতিদের দুর্ভোগ জানাজানি হতেই, বিক্ষোভ শুরু করে বিজেপি। কাটোয়া নগর কমিটির বিজেপি যুব মোর্চার সম্পাদক অনুপ বসু জানান, ‘‘তাঁদেরও একজন কর্মকর্তার আত্মীয়কে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে, নার্সিংহোমের সঙ্গে কাটমানি নেওয়ার কাজে যুক্ত, এবং এরসঙ্গে কয়েকজন তৃণমূল নেতারাও যুক্ত ৷’’


কাটোয়ার তৃণমূল বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় জানান, ‘‘এরকম ঘটনা ঘটলে খোঁজ নেওয়া হবে, আর বিজেপির কাজই হচ্ছে এসব নিয়ে রাজনীতি করা ৷’’


সাধারণ মানষের একটাই দাবি, রাজনীতি পরে হবে, হাসপাতালে সুচিকিৎসার ব্যবস্থাটুকু আগে নিশ্চিত করা হোক।