বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুর: বাঁকুড়ার রায়পুরে রাস্তার ওপর তৃণমূল নেতাকে গুলি করে খুন। সেই রাতেই ৩৮ কিলোমিটার দূরে পশ্চিম মেদিনীপুরের বিনপুরে উদ্ধার হল তাজা ল্যান্ডমাইন।
এই দুই ঘটনা ঘিরেই ফের একবার জঙ্গলমহলে মাথাচাড়া দিয়েছে মাওবাদী আতঙ্ক। জঙ্গল লাগোয়া এইসব জায়গার সঙ্গে মাওবাদীদের সম্পর্ক বহু পুরনো। আর মাওবাদীদের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে খুন, বিস্ফোরণের ভয়াবহ স্মৃতি। অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, রাইপুরে তৃণমূল নেতা অনিল মাহাতো খুনের নেপথ্যেও সেই মাওবাদীদের হাত নেই তো?
বৃহস্পতিবার সন্ধেয় রাইপুরের মোটবোদায় এই পার্টি অফিসে আসেন যুব তৃণমূল নেতা অনিল মাহাতো। পার্টি অফিসের বাইরে গাছতলায় তাঁর গাড়ি রাখা ছিল। প্রতক্ষ্যদর্শীদের দাবি, রাতে বাড়ি ফেরার জন্য পার্টি অফিস থেকে বেরিয়ে হেঁটে গাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন অনিল মাহাত। সেসময় একটি বাইকে করে চড়াও হয় তিন দুষ্কৃতী। সবার মুখ কালো কাপড়ে ঢাকা। একদম কাছে এসে তারা যুব তৃণমূল নেতাকে লক্ষ্য করে তিনটি গুলি করে। রক্তাক্ত অবস্থায় সেখানেই লুটিয়ে পড়েন অনিল মাহাতো।
গুলি লাগে অনিল মাহাতোর পাঁজরের কাছে। হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। নিহতের পরিবার এবং স্থানীয় তৃণমূল নেতারা এই ঘটনায় বিরোধীদের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন। নিহত তৃণমূল নেতার ভাই শ্যামল সাঁতরা বলেন, এলাকার রাজনৈতিক দলগুলি যুক্ত।
তবে তৃণমূল বিরোধীদের দিকে আঙুল তুললেও স্থানীয়দের একাংশের মনে ঘুরছে অন্য প্রশ্ন। এটা মাওবাদীদের ফিরে আসার কোনও বার্তা নয় তো? যদি এটাও হয় যে এই খুন দুষ্কৃতীরাই করেছে, তাহলে সেই কাজও তাদের দিয়ে মাওবাদীরাই করায়নি তো?
জঙ্গল লাগোয়া বাঁকুড়ার রায়পুর দীর্ঘদিন ধরে মোটামুটি শান্ত। কিন্তু, সেই শান্তি খানখান করে দিয়েছে তিনটি গুলির শব্দ। আতঙ্ক তৈরি করেছে ঘটনাস্থলের এই চাপ চাপ রক্তের দাগ।
এই ঘটনার জেরে রাইপুর শুক্রবার কার্যত অলিখিত বনধের চেহারা নিয়েছে। রাস্তাঘাট অন্যদিনের তুলনায় অনেক ফাঁকা। পরিবেশ থমথমে। লোকজনের চোখেমুখে ভয়ের ছাপ। চারিদিকে মোতায়েন পুলিশ। টহল দিচ্ছে কমব্যাট ফোর্সও।
স্থানীয় তৃণমূল কর্মীরা দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে শুক্রবার সকালে রাইপুরের একাধিক জায়গায় রাস্তা অবরোধ করে। মোটবোদায় সিপিএমের একটি পার্টি অফিস ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।



এদিকে, বাঁকুড়ার রাইপুর থেকে ৩৮ কিলোমিটার দূরে পশ্চিম মেদিনীপুরের বিনপুরে তাজা ল্যান্ডমাইন উদ্ধার হয়েছে। সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার, সন্ধেয় সিআরপিএফ-এর ১৬৫ নম্বর ব্যাটেলিয়নের কাছে খবর আসে, বিনপুরের কুশবনির জঙ্গলে রাস্তার ধারে সন্দেহজনক বস্তু পোঁতা রয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হয় তাজা ল্যান্ডমাইন।
তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, ২০০৮ সালে পঞ্চায়েত ভোটের সময় এখান থেকে মাত্র একশো মিটার দূরে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণ ঘটায় মাওবাদীরা।
খবর পেয়ে রাতেই আসে সিআরপিএফ-এর কোবরা বাহিনী। এলাকা ঘিরে ফেলে তারা। বন্ধ করে দেওয়া হয় যান চলাচল।  শুক্রবার, সকালে নিষ্ক্রিয় করা হয় ল্যান্ডমাইনটিকে। এর মধ্যে ৮-১০ কেজি বিস্ফোরক ছিল বলে সিআরপিএফ সূত্রে খবর।