কোচবিহার: শীতলকুচিতে গুলি কাণ্ডের তদন্তে সিআইডি কর্তা যেদিন অকুস্থলে পৌঁছলেন, ঘটনাচক্রে সেদিনই সিবিআইয়ের হাতে চার হেভিওয়েটের গ্রেফতারিকে ঘিরে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। দক্ষিণে মুখ্যমন্ত্রী যখন সিবিআই অফিসে ধর্নায়, তখন উত্তরে জোড়পাটকি বুথ এলাকা ঘুরে দেখল সিআইডির স্পেশাল টিম। 


গত ১০ এপ্রিল চতুর্থ দফার ভোটে কোচবিহারের শীতলকুচির জোড়পাটকিতে ১২৬ নম্বর বুথের বাইরে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে চারজনের মৃত্যু হয়। 


তৃতীয় বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই ঘটনার তদন্তভার সিআইডির হাতে তুলে দেন। সেইমতো সোমবার সকাল পৌনে আটটা নাগাদ জোড়পাটকির ১২৬ নম্বর বুথ পৌঁছয় সিআইডির চার সদস্যের প্রতিনিধি দল।


নেতৃত্বে ছিলেন ডিআইজি সিআইডি স্পেশাল কল্যাণ মুখোপাধ্যায়। সকাল পৌনে আটটা থেকে সকাল নটা, সোয়া এক ঘণ্টা ধরে চলে পুনর্নির্মাণ পর্ব।  


ঘটনার দিন জোড়পাটকির ১২৬ নম্বর বুথের বাইরে চারটি মৃতদেহ যেখানে যেখানে পড়েছিল, তা চিহ্নিত করে, এক জায়গা থেকে আরেক জায়গার দূরত্ব মেপে দেখেন গোয়েন্দারা। 


গোটা পর্বে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল জোরদার। এলাকা ঘিরে রাখে পুলিশ। ড্রোন ক্যামেরার মাধ্যমে এরিয়াল ভিউ নেওয়া হয়। তদন্ত প্রক্রিয়ায় সিআইডির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ছিল মাথাভাঙা থানার পুলিশ। 


সিআইডি ডিআইজি(স্পেশাল) কল্যাণ মুখোপাধ্যায় বলেন, আমরা এসেছি। সেদিনের ঘটনার পুনর্নির্মাণের চেষ্টা করছি। কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলছি। এটা একটা বড় ঘটনা। একটু সময় লাগবে তদন্তে।


শীতলকুচির ঘটনায় শুরু থেকেই উঠে এসেছে এক নাবালকের নাম। কেন্দ্রীয় বাহিনী তাকে মারধর করাতেই অশান্তি ছড়ায় বলে 
স্থানীয়দের অভিযোগ। সোমবার ওই নাবালক সব একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলে সিআইডির প্রতিনিধি দল। 


বিলকিস খাতুন নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, আমাকে জিজ্ঞেস করছিল সিআইডি। আমি বললাম সেদিন কেন্দ্রীয় বাহিনী গ্রামে ঢুকে বাচ্চা ছেলেটাকে মেরেছিল। দাঁড়িয়েছিল, তাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। বন্দুকের বাট, লাঠি দিয়ে মারে। বাচ্চাটার মুখ দিয়ে গ্যাজলা বেরিয়ে যায়। তখন সবাই ওকে নিয়ে গিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করে।


ঘটনার পুনর্নির্মাণ পর্বের পর সিআইডি অফিসাররা প্রত্যক্ষদর্শীদের নিয়ে মাথাভাঙা থানায় যান। সেখানে ৩৫ মিনিট থেকে প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান রেকর্ড করেন তাঁরা। 


চতুর্থ দফার ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে চারজনের মৃত্যুর ঘটনায় ইতিমধ্যেই মাথাভাঙার মহকুমা পুলিশ সুপার, থানার অফিসার-ইনচার্জ, তদন্তকারী অফিসার, ঘটনার দিনের ক্যুইক রেসপন্স টিম, সেক্টর অফিসারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিআইডি।


কিন্তু গুলি চালনায় অভিযুক্ত সিআইএসএফের ছয় জওয়ানকে তলব করা হলেও, রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থার সামনে তাঁরা এখনও হাজির হননি। এপ্রসঙ্গে কল্যাণ মুখোপাধ্যায় বলেন, যে ছয় কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানকে ডাকা হয়েছে, তাঁদের নিয়ম অনুযায়ী আবার চিঠি দেওয়া হবে। 


এতদিনের তদন্তে বিভিন্নপক্ষের যে বয়ান তাদের হাতে উঠে এসেছে, তার সঙ্গে প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান যাচাই করবে সিআইডির প্রতিনিধি দল।