কোচবিহার: কোচবিহারে পৌঁছেই বিস্ফোরক রাজ্য়পাল। দাবি করলেন, চিঠি দিয়ে তাঁর সাংবিধানিক পদকে নিয়ন্ত্রণ করার কথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। 


এদিন হেলিকপ্টারে করে কোচবিহারে পৌঁছন জগদীপ ধনকড়। নেমেই প্রথমে চড়া সুরে আক্রমণ শানান রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে।  বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী চিঠিতে বলেছেন, প্রশাসনিক নির্দেশে রাজ্যপাল সরকারের মুঠোয় চলে আসবে।’


রাজ্যপালের প্রশ্ন, ‘সাংবিধানিক পদকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী?’ তাঁর মতে, এভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।


রাজ্য়ের হিংসার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর উস্কানিকেই দায়ী করেন ধনকড়। বলেন, ‘বাংলা ছাড়াও ৪ রাজ্যে নির্বাচন হয়েছে, কোথাও রক্তপাত হয়নি। প্রচারে মুখ্যমন্ত্রীর উস্কানিমূলক মন্তব্যের জেরেই হিংসা হয়েছে রাজ্যে।’


শুধু রাজ্য প্রশাসন নয়, কলকাতা হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণেরও সমালোচবনা করলেন রাজ্যপাল। সম্প্রতি, হিংসা মোকাবিলায় রাজ্যের ভূমিকার প্রশংসা করে হাইকোর্ট। এই প্রেক্ষিতে এদিন উচ্চ আদালতের সমালোচনা করেন ধনকড়। 


এর আগে, এদিন সকালে, জেলা সফরের আগে ভোট-পরবর্তী হিংসা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করেন রাজ্যপাল। ট্যুইটে লেখেন, ‘এ ধরনের অভূতপূর্ব সঙ্কটের সময় ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা প্রয়োজন। এমনকি রাজ্যপালকেও সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে হবে রাজ্যকে। ভোট-পরবর্তী হিংসার মাঝে দাঁড়িয়ে এটা চটকদারি দেখানোর সময় নয়। রাজ্যপাল-মুখ্যমন্ত্রী দু’জনের পদই সাংবিধানিক। সবাই সংবিধানের প্রতি দায়বদ্ধ। শপথের পর আপনিও সংবিধান মানতে বাধ্য। সংবিধানকে অবহেলা করা যায় না।‘ 


তিনি যোগ করেন, ‘খেয়াল করুন, চারটি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে নির্বাচন হয়েছে। শুধুমাত্র এখানেই হিংসার ঘটনা ঘটেছে। নিজেদের পছন্দমতো ভোট দেওয়ার মূল্য চোকাচ্ছেন মানুষ। কীভাবে এমন পরিস্থিতি এড়িয়ে যাওয়া যায়? এতে কি গণতন্ত্র ধ্বংস হচ্ছে না? শীতলকুচি সফরের আগে ট্যুইটে মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ রাজ্যপালের।‘


রাজ্যপালের বক্তব্যকে খণ্ডন করে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেন, ‘সাংবিধানিক রীতি ভাঙছেন রাজ্যপালই।‘ এই প্রেক্ষিতে ফের রাষ্ট্রপতির কাছে নালিশ জানানোর হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি।


প্রসঙ্গত, রাজ্যপালের জেলা সফর নিয়ে উষ্মাপ্রকাশ করে কড়া চিঠি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। চিঠিতে তিনি স্পষ্ট বলেছেন, রাজ্য সরকারের অনুমতি পাওয়ার পরই, রাজ্যপালের সচিব তাঁর জেলা সফর চূড়ান্ত করবেন। সেই সফর ব্যক্তিগত হোক বা সরকারি, রাজ্যপালের সচিব সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলবেন।


সোশাল মিডিয়া থেকে জানতে পারলাম, একতরফা ভাবে বৃহস্পতিবার আপনি (রাজ্যপাল) কোচবিহার ও অন্যান্য জায়গায় যাচ্ছেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে কয়েক দশকের প্রথা ভেঙে জেলা সফর করছেন। আমি তাই আশাকরি, আপনি রীতি মেনে চলবেন এবং এই আকস্মিক সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করবেন।


পাশাপাশি, প্রশাসনিক কর্তাদের রাজ্যপালের ডেকে পাঠানো নিয়েও উষ্মা প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেছেন, গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বরের চিঠিতে আপনাকে পরামর্শ দিয়েছিলাম, যে মুখ্যমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভাকে এড়িয়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক না করতে এবং তাঁদের ডেকে না পাঠাতে। আমি জানতে পেরেছি, আপনি জেনে বুঝে তা এড়িয়ে যাচ্ছেন। শুধু সরকারি কর্মীদের নির্দেশ দেওয়াই নয়, তাঁদের কাছ থেকে সরাসরি রিপোর্ট তলব করছেন। আপনাকে আমি অনুরোধ করছি ও পরামর্শ দিচ্ছি, এগুলো করবেন না। মুখ্যসচিবকে বলছি, নিয়ম মেনে পদক্ষেপ করতে।


মুখ্যমন্ত্রীর কড়া চিঠির কিছুক্ষণের মধ্যেই ফের ট্যুইট করে রাজ্যপাল বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর চিঠির প্রতিক্রিয়ায়, আমি তাঁকে অনুরোধ করছি, তিনি যেন যে সংবিধানকে সাক্ষী করে শপথ নিয়েছেন, সেই সাংবিধানিক দায়বদ্ধতার বিষয়টি আরও একবার ভেবে দেখেন। মানুষ যে নিদারুণ দুঃখে রয়েছে, এখন সেই দুঃখ মোচনের সময়। আমি আশ্বস্ত করছি যে, আমি সাংবিধানিক সীমারেখার মধ্যে থেকে সমস্ত ধরনের সহযোগিতা করব।


এরইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে প্রথা না ভাঙার যে অনুরোধ করেছিলেন, তার পাল্টা সংবিধানের ১৫৯ ধারার উল্লেখ করে রাজ্যপাল বলেছেন, সংবিধানের ১৫৯ ধারা অনুযায়ী ‘আমার সম্পূর্ণ সাধ্য ও ক্ষমতা অনুযায়ী আমি সংবিধান ও আইন রক্ষা করব এবং পশ্চিমবঙ্গের মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করব। আমার শপথবাক্য অনুযায়ী যা করা উচিত, আমি তার সবটাই করব।


এরইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীকে এই দু’ পাতার চিঠি দিয়ে বর্তমান পরিস্থিতিকে ফের একবার গণতন্ত্রের লজ্জা আখ্যা দিয়ে, রাজ্যপাল দাবি করেছেন, বারবার তাঁর সতর্কবার্তা সত্ত্বেও প্রশাসন, সাংবিধানিক নিয়ম কানুন ও আইনের শাসন থেকে ক্রমেই দূরে সরে যাচ্ছে