অরিন্দম সেন, আলিপুরদুয়ার : সোশ্যাল মিডিয়ার সুবাদে স্বস্তি ফিরল আলিপুরদুয়ারের তিন পরিবারে। ভুটানে আটকে পড়া ৩ পরিযায়ী শ্রমিককে ফিরিয়ে আনল ভারতীয় দূতাবাস। প্রতিবেশী দেশের নির্মাণ সংস্থায় কাজে গিয়ে সেখানেই আটকে পড়েন শ্রমিকরা। অভিযোগ, ভারতীয় ওই শ্রমিকদের উপর চলে অকথ্য অত্যাচার। ঘরে ফেরার সুযোগ দেওয়া তো দূরের কথা, রোজ বাড়তে থাকে অত্যাচার। এই অবস্থায় নিরুপায় হয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের দুর্দশার কথা তুলে ধরে একটি ভিডিও পোস্ট করেন তিনি শ্রমিক। কিছুদিনের মধ্যেই যা হয়ে যায় ভাইরাল। আর ভাইরাল হওয়া শ্রমিকদের সাহায্যের আবেদন চোখে পড়ায় তৎপর হয় প্রশাসন।
বেশি রোজগারের আশায় কাজ করতে ভুটানে গিয়েছিলেন। কিন্তু রোজগারের বদলে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার সাক্ষী হতে হয়েছে। অবশেষে প্রশাসনের সহযোগিতায় প্রায় ১৮ মাস পর বাড়ি ফিরলেন আলিপুরদুয়ারের বাসিন্দা তিনজন পরিযায়ী শ্রমিক। ঠিক কী ঘটেছিল তাঁদের সঙ্গে? ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে এক ঠিকাদারের মাধ্যমে ভুটানের একটি নির্মাণ সংস্থায় কাজ করতে যান ১৪ জন ভারতীয় শ্রমিক। ডিসেম্বর মাসে ১১ জন শ্রমিককে নিয়ে ঠিকাদার দেশে ফিরে এলেও ভুটানে থেকে যান ৩ শ্রমিক। অভিযোগ, এরপরই তাঁদের ওপর অকথ্য অত্যাচার শুরু করেন নির্মাণ সংস্থার মালিক।
একসময় অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে, ফেসবুকে নিজেদের অবস্থার কথা জানিয়ে একটি ভিডিও পোস্ট করেন ভুটানে আটকে পড়া তিনজন। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয় সেই ভিডিও। অবশেষে ভারতীয় দূতাবাস ও আলিপুরদুয়ার জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ফিরিয়ে আনা হয় তাঁদের। বাড়ি ফিরতে পেরে স্বস্তির নিঃশ্বাস তাদের। ভুটান থেকে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিক নূরজামাল হক বলেছেন, 'আমাদের উপর মানসিক অত্যাচার শুরু হয়। ঠিকাদারের কাছে মালিকপক্ষ ৩ লক্ষ ৫২ হাজার ৪০০ টাকা পায়। ওই টাকা আদায়ের জন্য অত্যাচার শুরু হয়। বাড়ি আসতে দেওয়া হয়নি, নথিপত্র কেড়ে নেওয়া হয়েছে। মাইনেও আটকে রাখা হয়।' অপর শ্রমিক আলি হোসেন বলেছেন, 'আমাদের পরিস্থিতির কথা জানিয়ে ফেসবুকে ভিডিও পোস্ট করি। সেটা ভাইরাল হয়। এরপরই ভুটানের শ্রম দফতর ও আলিপুরদুয়ার জেলা প্রশাসন ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে ফিরিয়ে আনে। ৩ জনকেই ফিরিয়ে আনা হয়।'
মাদারিহাটের বিডিও সারং তামাঙ্গ বলেছেন, 'ভুটানে লকডাউনের কারণে আটকে ছিলেন এই শ্রমিকরা। খবর পেয়ে আমরা উদ্যোগ নিই। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেয়। ফিরিয়ে আনা হয়। এই শ্রমিকদের দেশেই কাজ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।' আতঙ্কের দিন কাটিয়ে ঘরের ছেলে ঘরে ফেরায় খুশি তিন শ্রমিকের পরিবার।