শান্তনু নস্কর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা: শুধুই এগিয়েছে সময়। কিন্তু একাধিক মানুষের চিন্তাধারা এখনও বদলায়নি। এই একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়েও স্রেফ কুসংস্কারের বলি হতে হল এক শিশুপুত্রকে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবা থানার শম্ভুনগর গ্রামের ঘটনা। 


সাপে কামড়ায় ১১ বছরের এক বালককে। এরপর তাঁকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে না নিয়ে গিয়ে ওঝা-গুনিনের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। এরই মাঝে মৃত্যু হয় বালকটির। মৃত বালকের নাম দীপ সরদার। 


জানা গিয়েছে, রবিবার শম্ভুনগর গ্রামের বাসিন্দা দীপ সরদার মায়ের সঙ্গে বিছানায় শুয়ে ছিল। ভোররাতে হঠাৎ তাকে কিছু একটা কামড়ায় এবং সে তার মাকে সেকথা জানায় বলে দাবি। 


এরপরই দীপের মা রবিবার সকালে তাকে স্থানীয় অনন্ত বৈরাগী নামে এক ওঝার কাছে নিয়ে যান। সেখানে মাটি পোড়া থেকে শুরু করে একাধিক প্রকারের ঝাড়ফুঁক করা হয় বলে জানা গেছে। 


বালককে খাওয়ানো হয় বিভিন্ন গাছ-গাছালির ওষুধও। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে এসমস্ত চলার পর পরিবারের লোকজন তাকে বাড়ি নিয়ে চলে আসেন।


এরপর ওইদিন বিকেলে ফের অসুস্থ বোধ করে দীপ। তখন তাকে পরিবারের সদস্যরা ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে আসেন। হাসপাতালে চিকিৎসা শুরু হওয়ার আধ ঘণ্টার মধ্যে ওই বালককে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।


ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসক সমরেন্দ্র রায় জানান, যে সময় রোগীকে নিয়ে আসা হয় তখনই সে মৃতপ্রায়। এরপর চিকিৎসা শুরু হতে হতেই রোগীর মৃত্যু হয় বলে দাবি চিকিৎসকের। তবে তিনি একথাও জানিয়েছেন যে সঠিক সময়ে দীপকে হাসপাতালে নিয়ে এলে হয়তো প্রাণে বাঁচানো যেত।


তবে কুসংস্কারের বশে বাড়ির লোকজন ছোট্ট দীপকে প্রথমে হাসপাতালের বদলে নিয়ে যান ওঝার কাছে। ওঝার কাছে সময় নষ্ট করার ফল পেতে হল এগারো বছরের শিশুকে। 


পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। কান্নায় ভেঙে পড়ে গোটা পরিবার। গোটা ঘটনায় গোসাবার বিডিও সৌরভ মিত্র জানান, 'ওই ওঝার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশকে জানিয়েছি।' সকলকে বারবার সচেতন করা সত্ত্বেও একই ঘটনা ঘটছে বলে দাবি তাঁর। 


সমস্যার সমাধানে এই  সপ্তাহের মধ্যে আবার এলাকার সমস্ত ওঝা, গুনিনদের নিয়ে আলোচনায় বসার ভাবনা তাঁর। সাপের কামড়ের চিকিৎসা করাতে যাতে সাধারণ মানুষকে হাসপাতালমুখী করা যায়, সে দিকেও নজর দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।