ঋত্বিক মণ্ডল, হাওড়া: দোকানে একের পর এক সাজানো পিঠে। বাঙালির একান্ত আপন দুধপুলি-পাটিসাপটার পাশাপাশি রয়েছে চকলেট পিঠে, ড্রাই ফ্রুট পিঠে, ম্যাংগো পিঠে। কিন্তু নজর কেড়েছে শুধুমাত্র একটাই। 'ভোল বদল' পিঠে। সম্প্রতি হাওড়ার রামরাজাতলার এক মিষ্টির দোকানে পৌষ পার্বণ উৎসবে নজর কেড়ে বিক্রি হয়েছে ভোলবদল পিঠে। ওপরে সবুজ চালগুঁড়ির মোড়ক আর ভেতরে গেরুয়া। ভেতরের পুরটা গাজরের তৈরি।


পুলি উৎসব উপলক্ষে একাধিক মিষ্টি থাকলেও দেদার বিকিয়েছে ভোলবদল পিঠে। বাংলার রাজনীতি পৌষ মাসটাই এমনই কেটেছে। আজ যে রাজনৈতিক নেতা এই দলে সকাল হতেই তিনি অন্য রাজনৈতিক দলের। আজ যিনি 'বেসুরো', কাল তিনি বিজেপিতে। শাসক দল তৃণমূল থেকে বিজেপির গেরুয়া রঙের যাওয়ার ঝোঁকটাই বেশি। বিষয়টা শুধুমাত্র টেলিভিশনের টক-শো সরগরম করা বা চায়ের দোকানের আড্ডায় সীমিত নেই। এবার এই ভোলবদল ঢুকে পড়ল বাঙালির অত্যন্ত প্রিয় সংক্রান্তির পিঠে উৎসবে।

শুভময় মল্লিক যিনি এই পিঠে তৈরি করেছেন তার কথায়, "শুধু মজার ছলেই এই পিঠে বানিয়েছি। আসলে রাজনৈতিক নেতাদের এখন যেমনটা দেখছি, বাইরেটা একরকম আর ভিতরে আরেক। তাই ভাবলাম এটা পিঠেতেও করা যেতে পারে"।

মল্লিক বাবু নিছকই মজার ছলে বানালেও, ব্যাপারটা সিরিয়াসলি নিয়েছেন ক্রেতারা। প্রায় প্রত্যেক ক্রেতাই অন্য ফিউশন পিঠের সঙ্গে চেখে দেখেছেন এই ভোলবদল পিঠে। কেউ কেউ আবার বাড়ি নিয়ে গিয়েছেন বাসি ভোলবদল পিঠের স্বাদ চেখে দেখবেন বলে। বলছেন প্রস্তুতকারকই।

যে হাওড়ায় এই পিঠের কথা এখন মানুষের মুখে মুখে ফিরছে রাজনৈতিক দলছুটটা সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে এই জেলাতেই। চলতি মাসেই তৃণমূলের এই জেলার দুই মন্ত্রী ইস্তফা দিয়েছেন। লক্ষ্মীরতন শুক্লা মন্ত্রিত্বে ইস্তফা দিয়ে তার ক্রিকেট ক্যারিয়ারেই মনোনিবেশ করেছেন। বেশ দীর্ঘ দিন ধরে বেসুরো গাওয়া রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ও বনমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন এই পৌষ মাসেই। দুজনেরই বিজেপিতে যাওয়া নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। বার কতক দলের বিরুদ্ধে কথা বলে বহিষ্কৃত হয়েছেন বালির তৃণমূল বিধায়ক বৈশালী ডালমিয়া। হাওড়া জেলার এই নেত্রীর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ বিজেপিতে যাওয়া নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে।

হাওড়ায় এখন এই তিন জনকে নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি, চর্চায় রয়েছে চতুর্থ চরিত্র। তিনি আর কেউ নন রামরাজাতলা ভোলবদল পিঠে।