বিজেন্দ্র সিংহ, উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায় ও সুদীপ্ত আচার্য, কলকাতা: মুকুল রায় তৃণমূলে ফিরতেই একে একে মুখ খুলতে শুরু করেছেন বিজেপির নেতা-নেত্রীরা। যার জেরে কার্যত সামনে চলে এসেছে বিজেপির অন্দরের ফাটল। শুক্রবার বনগাঁয় বিজেপি-র সাংগঠনিক জেলার বৈঠকেও গরহাজির ছিলেন বেশ কয়েকজন জন প্রতিনিধি।


পুরনো রাজনৈতিক ঠিকানায় ফিরলেন মুকুল রায়। বিজেপি থেকে আবার তৃণমূলে। তবে দিল্লিতে তাঁর ঠিকানায় এখনও জ্বলজ্বল করছে সদ্য ছেড়ে আসা দলের স্মৃতি। মুকুল রায় বিজেপি ছাড়তেই দলের অন্দরে কার্যত তোলপাড় পড়ে গেছে। একে একে মুখ খুলতে শুরু করেছেন নেতা-নেত্রীরা।


শুক্রবার সকালে যখন মুকুল রায়ের তৃণমূলে ফেরার জল্পনা চলছে, তখনই বিজেপি নেতা তথাগত রায় ট্যুইটারে লেখেন, তৃণমূল থেকে বিজেপিতে আসা যে সব নেতা আবার তৃণমূলে ফিরে গেছেন তাঁদের সম্বন্ধে আমি প্রয়াত সিপিএম নেতা হরেকৃষ্ণ কোঙারের একটি মন্তব্যের পুনরাবৃত্তি করছি। ‘‘মল মূত্র ত্যাগ করলে মানুষ দুর্বল হয় না, সবলই হয়”। ১৯৬৪ সালে যখন কম্যুনিস্ট পার্টি ভাঙে তখন সিপিআই নেতাদের সম্বন্ধে এই উক্তি।


এর কয়েকঘণ্টা পরই বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন মুকুল রায়। তারপরই আবার চার্টার্ড ফ্লাইটে দিল্লি গিয়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া বৈশালী ডালমিয়া ফেসবুকে লেখেন, বাংলার নেতা, বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারীকে অনুরোধ করব, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সমস্ত আবর্জনাকে বিজেপি থেকে দূর  করুন।


একদা মুকুল-অনুগামী বলে পরিচিত এবং তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া অনুপম হাজরা আবার মুকুলের প্রত্যাবর্তনকে অস্ত্র করেই দলীয় নেতৃত্বকে কার্যত হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। যেখানে বৈশালীর দিকে প্রচ্ছন্ন নিশানাও রয়েছে। অনুপম ফেসবুকে লিখেছেন, নির্বাচন চলাকালীন দু-এক জন নেতাকে নিয়ে অতি মাতামাতি করা এবং যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও লবিবাজি করে বাকিদরে বসিয়ে রেখে অবজ্ঞা বা অপমান করার করুণ পরিণতি!!! চার্টার্ড ফ্লাইটের রয়্যাল যাত্রীরাও মিসিং। এখনও সময় আছে। বঙ্গ বিজেপির উচিত, লবিবাজি বন্ধ করে যোগ্যতা অনুসারে বসে থাকা নেতাদের কাজে লাগানো।


একে ভোটে ভরাডুবি। তার মধ্যে মুকুলের দলত্যাগ ঘিরে সামনে চলে এসেছে দলের ফাটল। এই প্রেক্ষাপটে তারকেশ্বরের পরাজিত বিজেপি প্রার্থী স্বপন দাশগুপ্ত ট্যুইট করে বলেছেন, ভোটের ধাক্কা উদ্বেগজনক। বাংলার বিজেপির উচিত শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া। সেই প্রক্রিয়া চলছে। নতুন এবং পুরনো কার্যকর্তাদের হতাশ হয়ে গুটিয়ে যাওয়ার কোনও কারণ নেই। ২.২ কোটি ভোটের ভিত্তিতে বিজেপি উঠে দাঁড়াবে এবং নিজের ব্যাপ্তি বাড়াবে।


এদিকে, মুকুল রায়ের দলবদল নিয়ে উথালপাথালের মধ্যেই, শুক্রবার একটি ইঙ্গিতপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে।শুক্রবার বনগাঁয় বিজেপি-র সাংগঠনিক জেলার বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দিলীপ ঘোষ।কিন্তু, বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর,গাইঘাটার বিধায়ক সুব্রত ঠাকুর,বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস ও বনগাঁ উত্তরের বিধায়ক অশোক কীর্তনিয়া সভায় উপস্থিত ছিলেন না।  এ ব্যাপারে দিলীপ ঘোষ বলেছেন, সকলকে ডাকা হয়েছিল৷ আমাদের বহু কর্মী ক্ষতিগ্রস্ত। ওঁরা তাঁদের পাশে রয়েছেন। সেবামূলক কাজ করছেন।সব মিলিয়ে মুকুলের দলবদল ঘিরে ফের রাজ্য রাজনীতিতে ঝড়।